বাংলাদেশে হাজারো শতবর্ষী অনেক বড় বড় গাছ রয়েছে। তাদের অনেক গুলোই এতো বড় যে সেই গাছ গুলো এখন বিশ্বয়ের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মল্লিকপুরে তেমনি একটি শতবর্ষী বট গাছ রয়েছে। এই বট গাছটি এশিয়া মহাদেশের সব থেকে বড় বট গাছের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই বট গাছটি দেখতে মল্লিকপুরে ভীর জমায়।
১১ একর জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ৪৫টি উপবৃক্ষের এ গাছটি। পুরনো।এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। বর্তমানে বটগাছটি ৫২টি বটগাছে রূপ নিয়েছে। বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম খ্যাত এ বটগাছের অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা রয়েছে । সুঁইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ হিসেবেই এটি সমধিক পরিচিত। এলাকাবাসীর মতে, গাছটি প্রায় দুইশ’ বছরের । দক্ষিণ- পূর্ব পাশের বৃক্ষগুলো জমাটবদ্ধ এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে কিছুটা ফাঁকা ছাউনি দিয়ে বেষ্টিত। বৃক্ষটির ৩৪৫টি বায়বীয় মূল মাটিতে সঙ্গে সংযুক্ত এবং ৩৮টি মূল ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। মূলবৃক্ষ এখন আর নেই। মাঝখানে কিছু অংশ ফাঁকা এবং চারপাশে শাখা- প্রশাখায় ঘেরা। একসময় একটি কুয়ার পাশে ছিল এ বিশাল গাছের মূল অংশ। তখন আশপাশে জনবসতি ছিল না বললেই চলে। রাস্তার ধারের এ গাছটির ডালপালা পূর্ণ থাকত সবুজ পাতায়। গাছের নিচে রোদ-বৃষ্টি কিছুই পড়ত না। মাঘের শীতের রাতেও গাছতলায় আবহাওয়া অন্যরকম থাকত।
জনশ্রুতি আছে, সুঁইতলা-মল্লিকপুরের এ স্থানটির মালিক ছিলেন পার্শ্ববর্তী রায়গ্রামের জোতদার নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবর্তী সময়ে এটি সরকারি খাসজমি হয়ে যায়। কথিত আছে, পূর্বের তিথি অনুযায়ী এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পাঁঠা বলি দিত। এ গাছের নিচে একটি স্থায়ী কালীপূজার আসন রয়েছে, যেখানে মানুষ মানত করে রোগমুক্তির আশায়। এখনো ফি-বছর চৈত্রসংক্রান্তিতে মেলা বসে। বটগাছটিকে কেন্দ্র করে পাশেই বাংলা ১৩৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেথুলী বা মল্লিকপুরের বাজার। মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত হোসেন মিয়া জীবিত থাকাকালে এ গাছ দেখাশোনা করতেন স্বেচ্ছায়। তিনিই সর্ব প্রথম এখানে একটি দোকান দেন এবং বাজার প্রতিষ্ঠিত করেন। পর্যায়ক্রমে বাজারের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে অনেকগুলো দোকান আছে এ বাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এখানে। অনেকের মতে, দিনের বেলায়ও গভীর ছায়ায় প্রায় ঢাকা থাকত বটতলা। বৃক্ষটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর।
১৯৮২ সালে বিবিসির সংবাদভাষ্যের মাধ্যমে গাছটির আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু কোনো সচেতন পরিচর্যা নেই এই বটগাছটির। অযত্ন, অবহেলা আর এলাকার কিছু অসাধু মানুষের অত্যাচারে বিলীন হতে বসেছে বটগাছটি।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি ঝিনাইদহ জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। ঝিনাইদহ থেকে বাস অথবা সিএনজি দ্বারা এই প্রাচীন বটগাছটি দেখতে যাওয়া যায় ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে ২৫ কি.মি)