সাত গম্বুজ মসজিদ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1604

সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারনে মসজিদের নাম হয়েছে ‘সাতগম্বুজ মসজিদ’। এটি মোঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৮০ সালে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। মসজিদটি লালবাগ দুর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মসজিদের সাতটি গম্বুজ থাকার কারণে একে ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’ বলা হয়। সাত গম্বুজের মধ্যে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ ও চারটি ছোট গম্বুজ। এর মিনারের সংখ্যা চারটি।

সাত গম্বুজ মসজিদ এর ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণের প্রতি কোনায় একটি করে অনু গম্বুজ থাকায় একে সাত গম্বুজ মসজিদ বলা হয়। এর আয়তাকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। এর পূর্বদিকের গায়ে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। দূর থেকে শুভ্র মসজিদটি অত্যন্ত সুন্দর দেখায়। মসজিদের ভিতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মত স্থান রয়েছে।

মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশে হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে অষ্টকোনাকৃতি এবং বাইরের দিকে চতুষ্কোনাকৃতির। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে। একসময় মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাও কষ্টকর। বড় দালানকোঠায় ভরে উঠেছে মসজিদের চারপাশ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।

মসজিদের অনুভূমিক প্যারাপেট এবং গম্বুজের ড্রাম সারিবদ্ধ মেরলোন নকশায় শোভিত। পূর্ব ফাসাদ প্রচলিত মুগল রীতির প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। মিহরাবগুলির সম্মুখভাগ মনোরমভাবে খাঁজকাটা। কেন্দ্রীয় মিহরাবকে বেষ্টনকারী আয়তাকার ফ্রেমটির উপরের দিকে রয়েছে বদ্ধ শিখরসদৃশ ফ্রিজ। সবগুলি গম্বুজের চূড়াই কলস ও পদ্ম শীর্ষ সম্বলিত এবং এদের অভ্যন্তরভাগের ভিত্তি পত্র নকশায় সজ্জিত। কেন্দ্রীয় গম্বুজের শীর্ষে রয়েছে পাঁচ স্তর বিশিষ্ট অলঙ্কৃত বিশাল মেডালিয়ন। উত্তর ভারতে অবস্থিত মুগল রীতির অন্যান্য নমুনার মতো মসজিদটির কোন প্রাচীর জাঁকজমকপূর্ণভাবে অলঙ্কৃত নয়, তবে তারপরও মসজিদটি তার বিভিন্ন অংশের জৌলুসময় সুবিন্যস্ততার জন্য আকর্ষণীয়।

মসজিদের শিলালিপিটি বর্তমানে অনুপস্থিত, তাই এটি নির্মাণের সঠিক সময় জানা যায় না। তবে গম্বুজ আচ্ছাদিত ফাঁপা ও বিশালাকার কর্ণার টাওয়ার ব্যতীত এর প্ল্যান ও অন্যান্য নির্মাণ শৈলী বিবেচনা করে মসজিদটিকে সতেরো শতকের শেষ দিকের ঢাকার বিভিন্ন মসজিদ, যেমন- লালবাগ দুর্গ মসজিদ (আনু. ১৬৭৮-৭৯) এবং  খাজা আম্বর মসজিদের (১৬৮০) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। শৈলীগত দিক বিবেচনা করলে মসজিদটির নির্মাণকাল ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে মনে হয়।

কীভাবে যাবেন:

প্রথমে আপনাকে আসতে হবে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাসে করে মোহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে আসা খুব সহজ। খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হবে না। বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখবেন একটি রাস্তা বাঁশবাড়ী হয়ে চলে গেছে শিয়া মসজিদের দিকে। বাঁশবাড়ীর রাস্তায় পা ফেলতেই দেখবেন রাস্তার বাম পাশে দাঁড়িয়ে আছে লাল রঙের শত বছরের পুরোনো মসজিদটি। পবিত্র রোজার মাসে সময় করে আপনিও দেখে আসতে পারেন চক্ষু শীতল করা এ মসজিদটি।