রূপলাল হাউজ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় ঊনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। এটি ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতল ভবন। এর পেছনভাগে বুড়িগঙ্গা নদী প্রবহমান।এটি জমিদার ও বণিকদের তৈরি। ১৮২৫ সালে আরমেনিয়ান জমিদার আরাতুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এটি। পরে ১৮৩৫ সালে রূপলাল দাস এবং তার ভাই রঘুনাথ দাস বাড়িটি কিনে নেয়। এরপর থেকে বাড়ির নাম হয় রূপলাল হাউজ। তখনকার যুগের অত্যন্ত ব্যয়বহুল স্থাপত্য এই রূপলাল হাউজ। বাড়িটি ইংরেজী “ই” আকৃতিতে তৈরি। রূপলাল হাউজের ডিজাইন করেছিলেন কলকাতার মার্টিন কোম্পানি।
প্রতিপত্তি আর আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশের প্রতীক হিসেবে রূপলাল দাস নির্মাণ করেছিলেন রূপলাল হাউজ। রূপলালের আদি নিবাস বুড়িগঙ্গার ওপারে শোভাড্যা গ্রামে। তার দাদা মথুরানাথ পোদ্দার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে শুরু করেছিলেন পোদ্দারি ব্যবসা। তিনি তখন বাট্টা দিয়ে টাকা, আধুলি, সিকি ইত্যাদি মুদ্রা ভাঙ্গিয়ে দিতেন। মথুরানাথ তখনকার দিনে প্রতিদিন বাংলা বাজারে রাস্তার উপর চট পেতে টাকা ভাঙানোর দোকান সাজিয়ে বসতেন। তৎকালিন পূর্ববঙ্গে বাংলাবাজার ছিল পয়সা লগ্নি ও টাকা বিনিময়ের কেন্দ্র। মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে মথুরানাথ খুব অল্প সময়ে অসম্ভব সফলতা অর্জন করেন। তখন তিনি রাস্তার দোকান উঠিয়ে বাংলা বাজারে জমি কিনে নিজস্ব দোকান দিয়ে বসেন । পরে তিনি মুদ্রা ভাঙানোর কাজ ছেড়ে দিয়ে লগ্নি ও হুন্ডির কারবারে নামেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মথুরানাথ তৎকালিন একশ টাকায় বছরে ৫৭০ টাকা শোধ নিতেন। ব্যবসার ধারাবাহিক উন্নতির ফলে ক্রমেই মথুরানাথ ঢাকার শ্রেষ্ঠতম ধনাঢ্য হিন্দু ব্যবসায়ীতে রূপান্তরিত হন। ১৮৬০ এর দশকে সামাজিক প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্য যে মথুরানাথের পুত্ররা জমিদারিও কিনতে শুরু করেন। মথুরানাথের ছিল দুই পুত্র। স্বরূপ চন্দ্র দাস এবং মধুসূদন দাস। স্বরূপচন্দ্রের পুত্র (মথুরানাথের পৌত্র) রূপলাল দাস ফরাশগঞ্জে ভিক্টোরিয়ান স্টাইলে একটা বিশাল জমকালো বাড়ি নির্মাণ করেন।
তিনি নিজের নামে এর নাম দেন রূপলাল হাউজ। অধিকাংশ ইতিহাস বেত্তাদের মতে, ঊনিশশতকের ষাটের দশকে রূপলাল আরাতুন নামের এক আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি পুরনো ভবন ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এ ভবনটি মার্টিন এন্ড কোং কোম্পানির একজন স্থপতিকে দিয়ে পুনঃনির্মাণ করেন এবং এর নাম দেন রূপলাল হাউজ। রূপলাল হাউজ সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থাপত্যরীতির দুটি অসমান বস্তুকে বিভক্ত করা একটি দ্বিতল প্রাসাদ। এটি প্রায় ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ। বাড়িটির পেছনে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গা নদী থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। রূপলাল হাউজ ঔপনিবেশিক আমলে প্রবর্তিত পরবর্তী রেঁনেসা যুগের ইউরোপীয় স্থাপত্যের এক চমৎকার উদাহরণ। এর গঠন কাঠামো্ ‘উ’ আকৃতির। যার তিন বাহু নগরের দিকে প্রসারিত। মাঝের বাহুটি সবচেয়ে বড়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮.৩৩ মিটার।
কীভাবে যাবেন:
রূপলাল হাউজ পুরাতন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তরতীরে অবস্থিত। আপনি যেকোনো লোকাল অথবা কাউন্টার সার্ভিস বাসে করে পৌছে যেতে পারেন রূপলাল হাউজ।