গড় জরিপা দূর্গ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1309

কিছু কিছু ইতিহাস আছে যুগ যুগ এবং শত শত বছর ধরে এর স্মৃতি সংরক্ষিত হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ইতিহাস আছে এক সময় সব স্মৃতি মুছে গিয়ে কেবলি ইতিহাস হয়ে থাকে বইয়ের পাতায়। তেমনি একটি ইতিহাস শেরপুরের ‘গড় জরিপা দূর্গ’ বা স্থানীয় ভাষায় ‘জাঙ্গাল’ বা পরিখা।
ইতিহাসের বহু ঘটনার স্বাক্ষী ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার গড় জরিপার বা গড় দলিপা আজ থেকে প্রায় ৫শ বছর আগে কামরুপ থেকে আসা কোচ রাজা দলিপ সামন্তের মাটিদুর্গ এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। আধিপত্য পোক্ত করার জন্যে দলীপ সামন্ত গড় দলীপা দূর্গ নির্মাণ করেন। তবে মাটির দুর্গে ৪টি জাঙ্গালের জাঙ্গাল বা পরিখা মধ্যে ১টির এখনো অস্তিত্ব রয়েছে।

এ দূর্গের ইতিহাস পড়ে কেউ যদি এর সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষের কাছে যায়, তবে হয়তো তিনি এ ইতিহাসকে কাল্পনিক বলে আখ্যায়িত করবে। কারণ, ধ্বংসাবশেষের শেষ চিহৃত অবশিষ্ট ওই দূর্গের প্রায় ৪০ ফুট উচু পরিখাটি এখন ১০ ফুটের বেশী উচ্চতা নেই। ইতিহাস সূত্রে জানাগেছে, ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর অঞ্চলে দলিপা নামক একজন কোচ রাজা রাজত্ব করতেন। উত্তরের গারো পাহাড়ের কড়ই বাড়ি, খুটিমারী, বার হাজারী হইতে দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং পূর্বে নেতাই নদী হইতে পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। কথিত আছে তিনি এই দুর্গ নির্মাণ করেন। সম্রাট আকবরের সময় এ অঞ্চলের নাম ‘দশ কাহনীয়া বাজু বলে’ ইতিহাসে পাওয়া যায়।

এই দূর্গে নকশার বিশেষ কাজ না থাকলেও ঐতিহাসিক বিবেচনায় এবং আকারের কারণে এর বিশেষ স্থান রয়েছে। তিনটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বাইরের প্রাচীর ও মাঝখানের প্রাচীরের মধ্যে ছিলো পরিখা। চারদিকে চারটি প্রবেশ পথ। এগুলোরো আবার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। পূর্বদরজা কাম দুয়ারী, পশ্চিমদরজা পানি দুয়ারী, দক্ষিণদরজা শ্যামশেখর দুয়ারী, উত্তরদরজা খিরদুয়ারী। ভেতরের প্রাচীরের মধ্যে ১.১৭০ বিঘা জমি। প্রাচীরের উচ্চতা ২৫ ফুট থেকে ৪৩ ফুট পর্যন্ত। প্রাচীরের পরিধি প্রায় ৫ কিলোমিটার। পরিখাগুলো ৪৫০ ফুট থেকে ৯০০ ফুট পর্যন্ত চওড়া।

কিভাবে যাবেন:-

সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুরে সরাসরি ট্রেনে আসা যায় না। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যেকোন ট্রেনে জামালপুর পর্যন্ত আসা যায়। জামালপুর থেকে সিএনজি অথবা বাস যোগে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভগ্ন গড়জরিপার দূর্গ।