ভোলা জেলার মুল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। মেঘনার কোলে লালিত চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ শ্যামল ঘেরা। সু বিশাল নদী-নালা, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, বিভিন্ন ধরনের ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান ও মূল ভূখণ্ডে রয়েছে শত শত হরিণের বিচরণ। মনপুরা দ্বীপ বিগত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে।
ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লোমওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বাগান। ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই চরগুলো হলো চরতাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, কলাতলীর চর ইত্যাদি।
মনপুরার ইতিহাস প্রাচীন। সাতশ বছর আগে এখানে পর্তুগীজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে সেখানকার বড় লোমযুক্ত কুকুর দেখে। এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা প্রচুর। পর্যটকদের কাছে মনপুরার আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে, এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এ ছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতা। আরো রয়েছে হরিণ, বানর, ভালুকসহ বিভিন্ন প্রাণী। গহীন জঙ্গলে ভয়ংকর কিছু প্রাণী রয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। মনপুরায় রয়েছে ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো চর তোজাম্মেল, চর পাতিলা, চর জামশেদ, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর নামে পরিচিত। চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশোরীর গলায় মুক্তার মালা। চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজের বিপ্লব। চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন চরগুলোর জন্ম। চরগুলোতে রয়েছে মানুষের বসতি। যাদের জীবন যাত্রা কিছুটা ভিন্ন। জেলে, চাষী, দিনমজুর, কৃষক এবং খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ।
স্থানীয়দের দাবি, ভ্রমণপিপাসু মানুষকে মুগ্ধ করার মতো ক্ষমতা রয়েছে সাগর কন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র পাল্টে যায়। সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলে যেন নতুন প্রাণ জেগে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন সাগর কন্যা মনপুরা অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষের সমাহার দেখে প্রথমে একে ঠিক চর মনে হবে না। যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া।
কিভাবে যাবেনঃ-
এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে রুটিন মাফিক। প্রতিদিন ঢাকা থেকে ১টি লঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টার সময় মনপুরা ও হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে পরদিন মনপুরা সকাল ৬টা পৌঁছে। অন্য একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে ১ দিন পর পর ছাড়ে। মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিদিন দুপর ২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি লঞ্চ ছাড়ে। এছাড়া বিভিন্নভাবে স্থল ও নৌ পথ দিয়ে যাতায়াত করা যাবে।