রানীখং টিলা| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1685

দুর্গাপুর গারো পাহাড় সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রকৃতিরসংমিশ্রণে এক অপরূপ লীলাভূমি। সারি সারি পাহাড়, টিলা, পাহাড়ের স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকা লাল, নীল, বেগুনি ও সাদা রঙের চীনামাটি,ঝর্ণার মতো বয়ে চলা সোমেশ্বরী নদী, নীল জলধারা, সিলিকা বালির ধূ ধূ চর এবং বন-বাঁদাড়ের পাশাপাশি সুসং রাজ্যের রাজবাড়ী, কমলরানীর দীঘি, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমী, হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, কমরেড মণিসিংহের স্মৃতিবিজড়িত টংক শহীদ স্মৃতিসৌধসহ নানা কিংবদন্তিতে সমৃদ্ধ এক জনপদ। নেত্রকোনা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ পাহাড়ি জনপদের আরেকটি আকর্ষণ রানীখং টিলা এবং এর ওপর নির্মিত শত বছরের প্রাচীন রানীখং মিশন। সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে স্থাপিত এ মিশনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ক্যাথলিক ধর্মপল্লী। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী’ নামে পরিচিত। ভারত সীমান্ত ঘেঁষে নান্দনিক কারুকার্যে নির্মিত এই ক্যাথলিক মিশন একটি দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যান সেখানে। প্রকৃতি আর ইতিহাস সেখানে সযত্নে রয়েছে একসঙ্গে।

রাণীখং নামকরণ নিয়ে কিংবদন্তী আছে যে, এ অঞ্চলে ‘‘খং-রাণী’’ নামে এক রাক্ষস বাস করত। গারো আদিবাসীরা এই রাক্ষসটিকে হত্যা করে এ অঞ্চলে শান্তি এনেছিল। যার ফলে এই অঞ্চলের নাম হয়েছিল রাণীখং। রানীখং নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত বলে এ মিশনটির নাম রানীখং মিশন।

সমতল থেকে বেশ উঁচু রানীখং টিলা। টিলার দক্ষিণ দিকে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বার পেড়িয়ে একটু এগুলেই চোখে পড়বে ধর্মপাল বিশপ হার্থসহ পাঁচ গারো হাজং আদিবাসীর মূর্তিসংবলিত একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের ডানদিকে একটি ফলকে লিখে রাখা হয়েছে ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে খ্রিস্টের মূর্তি। এখান থেকে একটু দূরের একটি কক্ষে সাধু যোসেফের মূর্তিও রয়েছে। এর বাম পাশে শত বছরের প্রাচীন ক্যাথলিক গীর্জা। পাঁচটি চূড়াসহ গীর্জাটির স্থাপত্যশৈলী অনন্য; মার্বেল পাথরের কারুকার্যশোভিত। গীর্জার সামনের পথ দিয়ে ওপরের দিকে এগুলে দেখা যাবে বিশ্রামাগার এবং মিশন পরিচালিত বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের পৃথক হোস্টেল। সবকিছু সাজানো-গোছানো, ছিমছাম। দেখে মনে হবে, পুরো এলাকাটিই যেন সুসজ্জিত বাগান। জায়গাটি দেশি-বিদেশি নানা ফুল-ফল ও বনজ গাছে পরিপূর্ণ।টিলার পূর্বপাশে দাঁড়িয়ে একটু নিচে তাকালেই সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ জলধারা বয়ে যেতে দেখা যায়। উত্তরের গারো পাহাড় থেকে ঝরনার মতো নেমে আসা এ নদীটির আদি নাম ‘সিমসাঙ্গ’। পরে সুসং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সোমেশ্বর পাঠকের নামানুসারে এর নাম হয় ‘সোমেশ্বরী’। নদীর স্বচ্ছ জলধারার নিচ দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় সিলিকা বালিকণা। নজর কেড়ে নেয় বালিকণার নিচ থেকে আদিবাসী নারী-পুরুষদের পাহাড়ি কয়লা এবং কাঠ সংগ্রহের দৃশ্য। ওপরের নীল আকাশও খুব কাছাকাছি মনে হয় রাণীখং টিলায় দাঁড়ালে। উত্তর পাশে চোখ মেললে হাতছানি দেয় ভারত সীমান্তে অবস্থিত মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড় সারি, অরণ্য, পাহাড়ের মাঝখান থেকে উঁকি মেরে থাকা আদিবাসীদের বাড়িঘর।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। এরপর সোমেশ্বরী নদী পেরিয়ে রিক্সা বা মোটর বাইক যোগে অর্ধ কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে রাণীখং মিশনে যাওয়া যায়।