রানী ভবানী রাজবাড়ি| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1247

চলনবিলের সৌন্দর্যমণ্ডিত সুন্দর, ছোট মফস্বল শহর নাটোর। রয়েছে মন মুগ্ধ করার মতো অনেক কিছুই। চলনবিলের সৌন্দর্যের সঙ্গে এখানে অবস্থিত নাটোর রাজবাড়ি আর দিঘাপতিয়ার উত্তরা গণভবন ইতিহাসের স্মারক হিসেবে নাটোরকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। আমাদের দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে শত শত বছরের পুরোনো রাজবাড়িগুলো অন্যতম। এই রাজবাড়িগুলোর ঐশ্বর্য আমাদের বুঝিয়ে দেয় কতটা সমৃদ্ধ ছিল বাংলা, কত রাজার পা পড়েছে এই বাংলায়। এক কথায় এসব হচ্ছে ইতিহাসের জীবন্ত প্রমাণ। তেমনি একটি রাজবাড়ি হচ্ছে রানী ভবানী রাজবাড়ি।

ঐতিহাসিকদের মতে, অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬-১৭১০ সালের মধ্যে নাটোর রাজবাড়িটি নির্মিত হয়েছিল। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির বিখ্যাত জমিদার গণেশরাম রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারির দায়িত্ব দেন তার ভাই রাম জীবনকে। আর এভাবেই সূচনা হয় নাটোর রাজবংশের। ১৭০৬ সালে রাজা রাম জীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকান্ত রাজবংশের রাজা হন। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পর নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর উপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১৮০২ সালে রাণী ভবানীর মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণ জমিদারির দ্বয়িত্বগ্রহণ করেন। ১২০ একর জায়গা জুড়ে রাজপ্রাসাদটি বিস্তৃত।

রাজবাড়ির মোট আয়তন ১২০ একর। ছোট-বড় ৮টি ভবন আছে। ২টি গভীর পুকুর ও ৫টি ছোট পুকুর আছে। রাজবাড়ি বেষ্টন করে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। পুরো এলাকা ২টি অংশে বিভক্ত – ছোট তরফ ও বড় তরফ। রাজবাড়ির উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলো হল শ্যামসুন্দর মন্দির, আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির।

১৯৮৬ সাল থেকে রাজবাড়ির পুরো এলাকাটি রাণী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা যুব পার্ক হিসেবে নাটোর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই রাজভবনে রাজা রামজীবন, রামকান্ত ও অর্ধ-বঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানী প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতেন।

১৯৪৭ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে শেষ রাজা প্রতিভানাথ ১৯৫২ সালে সপরিবারে কলিকাতায় বসবাস করতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে তত্কালিন পাকিস্তান সরকার ভবনটিকে গভর্নর হাউজ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তত্কালিন গভর্ণর মোনায়েম খান আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্ণর হাউজের উদ্বোধন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে উত্তরা গণভবন হিসাবে ঘোষণা করেন। এরপর ভবনটি সংস্কার করা হয় । বর্তমানে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের মিটিং এখানে অনুষ্ঠিত হয়। নাটোর রাজবাড়ি বর্তমানে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সাধারণ দর্শনার্থীরা রাজবাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি নাটোর জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। নাটোর জিরো পয়েন্ট থেকে অল্প দূরত্বের পথ রানী ভবানী রাজবাড়ি।