লুর্দের রাণী মা মারিয়ার ধর্মপল্লী।

1157

চলনবিল, বনলতা সেন আর কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতিতে সমৃদ্ধ নাটোর প্রাকৃতিক শোভা ও নানান সৌন্দর্যমন্ডিত নিদর্শনে ভরপুর। ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে তাই নাটোর একটি পছন্দের জায়গা। বনলতার সেনের নাটোরে তাই দুদণ্ড শান্তির খোঁজে ভ্রমণপ্রেমীরা ঘুরে বেড়ান। এখানকার নানান আকর্ষণীয় স্থানগুলো তাই সবসময়ই পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। আপনার নাটোর ভ্রমণে দেখে আসতে পারেন লুর্দের রাণী মা মারিয়ার ধর্মপল্লী।

নাটোর জেলার দক্ষিণে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার ৫টি ও ১ নং জোয়াড়ী ও ৫ নং মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ২টি সহ মোট ৭টি গ্রাম নিয়ে এই ধর্ম পল্লী প্রতিষ্ঠিত। এই ধর্মপল্লীকে বলা হয় লুর্দের রাণী মা মারীয়া ধর্মপল্লী তথা বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন। খ্রিস্টধর্ম পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে বলা হয় খ্রিস্টমন্ডলী বা সংক্ষিপ্তাকারে শুধু মণ্ডলী। স্থানীয়ভাবে খৃস্টধর্ম বিশ্বাসী জনসাধারণকে পরিচালনা ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যা বা সেবা দানের উদ্দেশ্যে গঠিত অথবা পরিচালিত একটি সাংগঠনিক কর্ম এলাকাকে ধর্মপল্লী বলা হয়। ‘লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী’ ঈশ্বর পুত্র যীশু খ্রিস্টের জাগতিক জননী মারীয়া বা মরিয়ম-এর পুণ্য নামের স্মৃতিতে উৎসর্গিত। এখানে ১৯৪০ সালের দিকে প্রথম স্বর্গীয় ফাদার থমাস কাত্তানের(পিমে), একজন ইতালীয় ধর্মযাজক সর্ব প্রথম আসেন এবং এখানকার গীর্জাঘরটি স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে।

এই ধর্মপল্লীর পুরো এলাকাটি দারুণ স্নিগ্ধ শোভায় পরিপূর্ণ। দৃষ্টিনন্দন গির্জাসহ মা মারিয়ার চমৎকার মূর্তি, ফুলের বাগান সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই ধর্মপল্লী বা গির্জা প্রশাসনের অধিনে একটি হাই স্কুল (সেন্ট যোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয়) ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়) পরিচালিত হয়। এছাড়া প্রায় ৪৫০ দরিদ্র আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর অবস্থানের জন্য পৃথক ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস পরিচালিত হয়। এলাকার হাজার হাজার দরিদ্র নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য একটি সেলাই কেন্দ্র পরিচালিত হয়। এছাড়া এলাকার প্রসূতি মায়েদের সেবা দানের জন্য উনিশ’শ ষাটের দশকে এখানে স্থাপিত হয় দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র যা এলাকার হাজার হাজার প্রসূতি মাকে নিরাপদ মাতৃত্বে সহায়তা প্রদান করেছে। ধর্মপল্লী কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় এখানে বহু ব্রিজ-কালভাট ও রাস্তাঘাট নির্মিত রয়েছে। মূলত এ এলাকার শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নে এখানকার গির্জা কর্তৃপক্ষ ও খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি নাটোর জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়।নাটোর জেলার দক্ষিন সীমানায় বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার ৫টি ও ১ নং জোয়াড়ী ও ৫ নং মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ২টি সহ মোট ০৭টি গ্রাম নিয়ে এই ধর্ম পল্লী প্রতিষ্ঠিত। যে কোন স্থান হতে বনপাড়া বাজারে এসে ১ কি:মি: পশ্চিমে গেলেই গীর্জার অবস্থান।