পুঠিয়া বড় শিবমন্দির| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1179

মৌর্য,সেন,পাল, মোঘল বংশের রাজাদের রাজত্বের স্মৃতি বিজরীত রাজশাহী জেলা। বাংলার অতি প্রাচীন জনপথ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জনপথ এই রাজশাহী। বিখ্যাত এবং সুস্বাদু সব আম চাষের জন্য এই জেলাটির এক অনন্য খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার দিক থেকে জেলাটি যেমন সবার নজর কারে তেমনি পর্যটন ব্যবস্থার দিক থেকেও প্রাচীন জনপদের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জেলাটি সকলের নিকট আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু। রাজশাহী জেলার পর্যটন আকর্ষনীয় স্থাপনা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পুঠিয়া বড় শিবমন্দির।

পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পাশে শিবসাগর নামক দীঘির দক্ষিণ পাড়ে বড় শিব মন্দির অবস্থিত। পুঠিয়া রাজবাড়ি ও তার পার্শবর্তী মৌজায় মোট চৌদ্দটি মন্দির এখনো পূর্ণ অবয়বে রয়েছে। মন্দিরগুলোর মধ্যে দুটি পঞ্চরত্ন, একটি দোচালা, একটি মিশ্ররীতির ত্রি-মন্দির, একটি অষ্টকোণা একরত্ন, দুটি সমতলছাদ বিশিষ্ট এবং বাকিগুলো পিরামিড আদলের চৌচালা ছাদ সংবলিত। মন্দিরগুলো নির্মাণে ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে। অলঙ্করণ হিসেবে অধিকাংশ মন্দিরেই হিন্দু ধর্মীয় ও তদানীন্তন সামাজিক বিষয়বস্তু অবলম্বনে উৎকীর্ণ পোড়ামাটির ফলক শিল্পের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।পুঠিয়া রাজবাড়ি এলাকায় প্রবেশপথের পূর্ব পাশের শিব সরোবরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত সুউচ্চ এই মন্দিরটি পুঠিয়ার মন্দির স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। সুউচ্চ (১১ইঞ্চি-৮ইঞ্চি) ও সুবিশাল এক বর্গাকার (৬৫ বর্গইঞ্চি) মঞ্চের উপর এক কক্ষ বিশিষ্ট এই মন্দিরটির প্রতিটি রত্নের উপরিভাগ ক্রমান্বয়ে সজ্জিতাকারে স্থাপিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতকগুলো সুঁচালো চূড়ায় আচ্ছাদিত। কেন্দ্রীয় কক্ষের অভ্যন্তরে কৃষ্ণপ্রস্তরে নির্মিত একটি বিশালাকৃতির শিবলিঙ্গ স্থাপিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় কক্ষ ও তার চারিদিকের প্রদক্ষিণ বারান্দার চার কোণের অভ্যন্তরস্থ উপরিভাগ অর্ধবৃত্তাকৃতির গম্বুজে ও চার বলয় চৌচালা ছাদে আচ্ছাদিত। প্রদক্ষিণ বারান্দার চারিধার মোগল রীতির খাঁজখিলান পথে উন্মুক্ত। মন্দিরটির সুউচ্চ মঞ্চে আরোহণের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি সিঁড়িপথ বিদ্যমান। ১৮২৩-১৮৩০ সনে রাজা জগন্নারায়ণের স্ত্রী রানি ভুবনময়ী এটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে সে সময় তিন লক্ষ মুদ্রা ব্যয় হয়েছিল বলে জানা যায়। পূর্বে মন্দিরায়তনের দ্বারের নিকট একটি জলঘড়ি ছিল যা বর্তমানে নেই। জনৈক আচার্য ব্রাহ্মণ তা পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। মন্দিরটির নির্মাণ কৌশল ও অলঙ্করণ অপূর্ব।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি রাজশাহী জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত স্থাপনাটি রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে বাস ও অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।