নেত্রকোনা জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সূফী সাধক ও ইসলাম ধর্ম প্রচারক হয়রত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রঃ) পূণ্যভূমি, মেঘালয়ের পাদদেশে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, পাহাড়ের কুল ঘেষে কলকল ধ্বনিতে বয়ে আসা স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি, হাওর বাওর নদী নালা খাল বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি নেত্রকোণা। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে হওয়া নেত্রকোণা মহকুমাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারিনেত্রকোণা জেলা করা হয়।
নামকরনের ইতিহাস:-
নাটোরকোণা থেকে নেত্রকোণায় রূপান্তরের কাহিনীটা হচ্ছে, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পাগলপন্থীদের বিদ্রোহ দমন এবং তাদেরকে পরাস্ত করার জন্য এই এলাকার এক ইংরেজ সাহেবকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এই সাহেব নাটোরকোণা বলতে পারতেন না। তিনি বলতেন ‘নেটেরকোণা’। ব্রিটিশদের উচ্ছারণের কারণে নাটোরকোণা এক পর্যায়ে নেটেরকোনায় রূপান্তর হয়। পরে কালের বিবর্তনে লোক মুখে নেটেরকোণাকে নেত্রকোনা বলতে শুরু করায় এক সময় নেটেরকোনা নেত্রকোণা হয়ে যায়।
অবস্থান ও আয়তন:-
এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা।
নেত্রকোণা জেলা ১০টি উপজেলা
আটপাড়া,
কলমাকান্দা,
কেন্দুয়া,
খালিয়াজুড়ি,
দুর্গাপুর,
নেত্রকোণা সদর,
পূর্বধলা,
বারহাট্টা,
মদন এবং
মোহনগঞ্জ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:-
কাহ্নপাদ ( দ্বাদশ শতক) – চর্যাপদের চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধদের একজন;
মনসুর বয়াতি (আনু. ১৮ শতক) – পল্লিকবি ও গায়ক;
নলিনীরঞ্জন সরকার (১৮৮২-১৯৫৩) – অবিভক্ত ভারতবর্ষের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ;
জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার (১৮৮৯ – ৩ অক্টোবর ১৯৭০) – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব, অগ্নিযুগের বিপ্লবী এবং অনুশীলন সমিতির অন্যতম শীর্ষনায়ক;
চন্দ্রকুমার দে (১৮৮৯ – ১৯৪৬) – লেখক ও লোকগল্প, লোকগীতি গবেষক ও সংগ্রাহক;
রশিদ উদ্দিন (১৮৮৯ -১৯৬৪) – প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ও সাধক;
জালাল উদ্দিন খাঁ (১৮৯৪ – ১৯৭২) – বিশিষ্ট বাউল কবি ও গায়ক;
উকিল মুন্সী (-১৯৭৮) – বাউল শিল্পী-সাধক;
কমরেড মণি সিংহ (২৮ জুলাই ১৯০১ – ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯০) – প্রখ্যাত বামপন্থী রাজনীতিবিদ;
রশিমনি হাজং (১৯০৮ – ৩১ জানুয়ারি ১৯৪৬) – টঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী;
কুমুদিনী হাজং (১৯৪২/৪৩ – বর্তমান) – টংক আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী;
যাদুমনি হাজং (বিশ শতক) – টঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী কর্মী;
শৈলজারঞ্জন মজুমদার (১৯০০ – ১৯৭৬) – রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও গবেষক, সংগীতগুরু;
মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন কাসিমপুরী (১৯০১ – ১৯৭৯) – লোক সাহিত্য বিশারদ;
খালেকদাদ চৌধুরী (২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭ – ১৬ অক্টোবর ১৯৮৫) – খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক, গল্পকার, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক;
গোলাম সামদানী কোরায়শী (৫ এপ্রিল, ১৯২৯ – ১১ অক্টোবর, ১৯৯১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক;
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ (জন্মঃ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০) – প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দু’বার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি
বিখ্যাত খাবার:-
বালিশ মিষ্টি
বিখ্যাত স্থান:-
উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী
বিজয়পুর পাহাড়ে চিনামাটির নৈসর্গিক দৃশ্য
রানীখং মিশন
টংক শহীদ স্মৃতিসৌধ
রানীমাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ
কমলা রানী দীঘির ইতিহাস
নইদ্যা ঠাকুরের (নদের চাঁদ) লোক-কাহিনী
সাত শহীদের মাজার
হজরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমির (রহ.) মাজার
রোয়াইলবাড়ি কেন্দুয়া
রোয়াইলবাড়ি দূর্গ
সাত শহীদের মাজার
আলী হোসেন শাহ্ এর মাজার
কিভাবে যাবেনঃ-
সড়ক পথে ঢাকা হতে নেত্রকোণা জেলার দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে নেত্রকোণা রেল স্টেশনের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। ঢাকার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে নেত্রকোণা আসার সরাসরি দুরপাল্লার বাস সার্ভিস আছে, এগুলোতে সময় লাগে ৪.৩০ হতে ৬.০০ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে সরাসরি নেত্রকোণা জেলা আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন নেত্রকোণার পথে যাতায়ত করে।