মুসা খানের মসজিদ বা মুসা খাঁর মসজিদ ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। বিনত বিবির মসজিদের পাশাপাশি এটি প্রাক-মুঘল স্থাপত্যের একটি নিদর্শন। পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাটদের বিপক্ষে বিক্রম দেখিয়ে বাংলার একটি অংশে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করা বারো ভূঁইয়াদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে ভূঁইয়াদের প্রধান ঈশা খাঁর পুত্র মুসা খানের নামে তৈরি মসজিদটি। বাহ্যিক চাকচিক্য হারালেও নান্দনিক নির্মাণ শৈলীতে তৈরি এ স্থাপনা এখনও সচল রয়েছে জামে মসজিদ হিসেবে। বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর ছেলে মুসা খাঁ মসজিদটি আনুমানিক ১৬৭৯ সালে নির্মাণ করেন।
নাম মুসা খান মসজিদ হলেও তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা নন বলেই ঐতিহাসিকদের সিদ্ধান্ত। এর স্থাপত্যশৈলী শায়েস্তা খানের স্থাপত্যরীতির মতো। সে কারণেই সন্দেহ। শায়েস্তা খান ঢাকায় আসেন আরও পরে। অধ্যাপক এম হাসান দানীর মতে, মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন মুসা খানের নাতি মনোয়ার খান। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনও তাঁর ‘ঢাকা: স্মৃতিবিস্মৃতির নগরী’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘দানীর মতোই যুক্তিযুক্ত’। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়াও তাঁর ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, মসজিদটির নির্মাতা সম্ভবত মুসা খানের পুত্র মাসুম খান অথবা পৌত্র মনোয়ার খান। পিতা বা পিতামহের নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল বলেই তাঁর অনুমান। নাজিমউদ্দিন রোডের নামও একসময় ছিল মনোয়ার খান রোড। মসজিদে কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি বলে এর সঠিক নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম নিয়ে এ ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সপ্তদশ শতকের শেষ থেকে অষ্টাদশ শতকের শুরুর মধ্যে মসজিদটি নির্মিত বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান।
মুসা খান মসজিদটি দেখতে অনেকটা খাজা শাহবাজের মসজিদের (তিন নেতার মাজারের পেছনে) মতো। ভূমি থেকে উঁচু মঞ্চের ওপর মসজিদটি নির্মিত। নিচে অর্থাৎ মঞ্চের মতো অংশে আছে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ। এগুলো এখন বন্ধ। দক্ষিণ পাশ দিয়ে ১২ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মসজিদের দরজায়। পূর্ব দিকে খোলা বারান্দা। চওড়া দেয়াল। পূর্ব-পশ্চিমের দেয়াল ১ দশমিক ৮১ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণের দেয়াল ১ দশমিক ২ মিটার চওড়া। পূর্বের দেয়ালে তিনটি ও উত্তর-দক্ষিণে দুটি খিলান দরজা। ভেতরে পশ্চিম দেয়ালের মধ্যে একটি প্রধান ও পাশে দুটি ছোট মেহরাব। চারপাশের দেয়ালে মোগলরীতির নকশা। বাইরের দেয়ালের চার কোণে চারটি মিনারখচিত আট কোণ বুরুজ। তার পাশে ছোট ছোট মিনার। বুরুজ ও ছোট মিনার ১৬টি। ছাদে তিনটি গম্বুজ। মাঝেরটি বড়। ওপরের কার্নিশ নকশাখচিত। বাইরের দেয়ালের পলেস্তারা মাঝেমধ্যেই খসে গেছে। ছাদে ও কার্নিশে জন্মেছে পরগাছা।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে মুসা খান মসজিদ আসা যায়। বাসে আসলে নামতে হবে শাহবাগ। সেখান থেকে রিক্সা করে মুসা খান মসজিদ যাওয়া যায়।