প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম ছিল একটি সমুদ্রবন্দর। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর (১৪ শতক) থেকে চট্টগ্রাম বন্দর একটি ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়। ৮২২ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলভাগ বিধ্বস্ত করে দেয়। প্লাবনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় সমুদ্রবক্ষে পলি জমে সৃষ্টি হয় অনেক চর। বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের স্বার্থে ব্রিটিশ সরকার বাতিঘর স্থাপনের জন্য জরিপকাজ পরিচালনা করে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ২৫ মাইল দক্ষিণে তিন দিকে বঙ্গোপসাগর পরিবেষ্টিত কুতুবদিয়ায় একটি সুউচ্চ বাতিঘর স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাতিঘর বা লাইট হাউজ হচ্ছে এমন এক ধরনের সুউচ্চ মিনার আকৃতির দালান যা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আলো ফেলে সমুদ্রের জাহাজের নাবিককে দিক নির্দেশনা দেয়া হয় এবং সেই সাথে সমুদ্রের অগভীর অঞ্চল সম্পর্কে নাবিককে সতর্ক করতে বাতিঘর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের যেসকল এলাকায় প্রচুর প্রবাল রয়েছে এবং যেসকল প্রবালগঠন জাহাজের ক্ষতি সাধন করতে পারে এমন সব সৈকত চিহ্নিত করতে বাতিঘর ব্যবহার হয়ে আসছে।
১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে কর্ণফুলি নদীর মোহনার ৪০ মাইল দূরে কুতুবদিয়াতে এই বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয়। ক্যাপ্টেন হেয়ার-এর পরিচালনায় এবং ইঞ্জিনিয়র জে,এইচ,টুগুড -এর নকশায় এই বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে এই বাতিঘরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেই সময়ে এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৪২৮ টাকা।
এই বাতিঘরের ভিত্তিভূমিতে পাথর স্থাপন করা হয় এবং ভিত্তির উপর গড়ে তোলা হয় ১২০ ফুট উচ্চতার টাওয়ার। টাওয়ারটির মাটির নিচে একটি কক্ষ ছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে টাওয়ারে অংশে ছিল ১৫ফুট উচ্চতার ১৫টি কক্ষ। সে সময় প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূর থেকে এর আলো রাতের জাহাজ-নাবিকরা দেখতে পারতো।
যেভাবে যাবেন:-
কয়েকটি রুটে যাওয়া যায় দ্বীপ কুতুবদিয়ায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে এসে ফিরিঙ্গি ঘাটে কুতুবদিয়াগামী ট্রলার ধরতে হবে। সকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে দুটি ট্রলার ছেড়ে যায় কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে। কুতুবদিয়ার বড় ঘোপ স্টিমার ঘাটে নেমে উপজেলা সদরে যেতে পারবেন রিকশায় চেপে।