প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব লীলাভূমি শেরপুর জেলার সীমন্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। গজনী অবকাশ কেন্দ্র বাংলাদেশের শেরপুর জেলা শহরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এর উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এটি নির্মিত হয়। এটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
পাহাড়ের ঢালে, গায়ে অথবা পাহাড় চূড়ায় সারি সারি শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস, মিলজিয়ামসহ আরো নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়াঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে সুনিপুণ শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। শিল্পীর এ আঁচড় খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী গারো পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে।
লাল মাটির উঁচু পাহাড়, টিলা, পাহাড়ী, টিলার মাঝে সমতল ভূমি দু’পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ী ঝর্ণা, যেন ছন্দতুলে এগিয়ে চলেছে। ঝর্ণার পানি এসে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সেখানে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় ও তার উপরে লেকভিউ পেন্টাগন। এখানে যাতায়াতের জন্যে রয়েছে দোদুল্যমান ব্রিজ। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক দোতলা রেস্ট হাউজ। এ রেস্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য রয়েছে অাঁকা-বাঁকা তিন শতাধিক ধাপ বিশিষ্ট পদ্মর্সিড়ি। পাদদেশে সানবাঁধানো বেদীসহ বটচত্বর। সেখানে গাড়ি পার্কিং-এর সুব্যবস্থাসহ পিকনিক দলগুলোর আড্ডায় মেতে উঠা ও খেলাধূলারও রয়েছে প্রচুর জায়গা। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিসেন্ট লেক, লেকের ওপর রং-ধনু ব্রিজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানসিতরী নৌকা, প্যাডেল বোট। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সৌধ, শিশু পার্ক, নাগরদোলা, পুতুল নাচ, কবি নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি। সেখানে রয়েছে কবিতা বাগ, আপনার লেখা মনের মতো কবিতাও সেখানে শোভা পেতে পারে। মাটির নিচ দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য ড্রাগন ট্যানেলের মুখের ভিতর দিয়ে পাতালপুরি লাভলেইন, মৎস্য কুমারী, হাতি, বাঘ, জিরাফ, হরিণ, বানর, ডাইনোসরের প্রতিকৃতি।
কিভাবে যাবেন :
এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়াত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মসৃণ পিচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে। শেরপুর শহর থেকে গজনীর দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশে আসা যায়।