ইট পাথরের শহরে দিনের ক্লান্তি ভুলে থাকার জন্য অন্যতম এক স্থান রাজধানীর সংসদ ভবনের অদূরে অবস্থিত চন্দ্রিমা উদ্যান। পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের পরিচালনায় ৭৪ একরের এ উদ্যানটি শহুরে সভ্যতার যান্ত্রিক ও পাথুরে আমেজকে ধরাশায়ী করে রেখেছে সেই ১৯৮১ সাল থেকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিসৌধ, ক্রিসেন্ট লেক, জলের ফোয়ারা, ঝুলন্ত সেতু ইত্যাদি উপাচারে সুসজ্জিত প্রতিরূপই হচ্ছে চন্দ্রিমা উদ্যান। উদ্যানের মূল প্রবেশদ্বারে নির্মিত ৩১ মিলিমিটারের বিদেশী টেম্পারড গ্লাসের পাটাতন যে কাউকেই বাঙালী জাতির সমৃদ্ধ রূচিবোধ ও সৌখিনতা সম্পর্কে জানান দেবে নিমিষেই। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সৌর্ন্দয্য হারাচ্ছে চন্দ্রিমা উদ্যান, সৌন্দর্য হারাচ্ছে শহুরে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অবলম্বন। রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক পরিচর্যা এবং কতৃপক্ষের উদাসীনতার ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। সবুজের মাঝে আজ যেন ধূসর আভা সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা গাছপালা, পোস্টার, দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনার চাপে রঙচটা হয়ে উঠেছে চন্দ্রিমা উদ্যান। উদ্যানটিতে কর্মরত একজন মালির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১০ জন মালি এ পুরো উদ্যানটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় যা অত্যন্ত অপ্রতুল।
প্রথম দিকে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান‘। এই নামকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতামতও পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, দক্ষিণপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর নাম চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন একে গবাদিপশুর খামার, খাস জমি এবং চাষাবাদ জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে এই স্থানে মরহুম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করা হয় এবং এলাকাটিকে পরিষ্কার করে দর্শণার্থীদের জন্য মনোরম স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে একে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে আবার চন্দ্রিমা উদ্যান করে। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটার নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নামে ফিরিয়ে আনেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছে। এখন এই স্থানটি কারো কাছে চন্দ্রিমা উদ্যান আবার কারো কাছে জিয়া উদ্যান। তবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি জিয়া উদ্যান নামেই বেশি পরিচিত।
শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধির দক্ষিণ পাশে ক্রিসেন্ট লেক অবস্থিত। এটি বাঁকা চাঁদের মত দেখতে বিধায় ক্রিসেন্ট লেক নাম রাখা হয়েছে। এটির দক্ষিণ পাশে চমৎকার করে সিঁঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ও দর্শণার্থীদের বসার স্থান করা হয়েছে চারপাশজুড়ে। ভিতরে প্রবেশের জন্য লেকের মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম সেতু। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর দুই পাশে দুটি ফোয়ারা রয়েছে। সন্ধ্যার পর ফোয়ারাগুলো চালু করা হলে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে