চিনি মসজিদ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1011

মসজিদ এর শহর এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। তাদের অনেক মসজিদ পুরান আমলের ঐতিহ্য বহন করে। কোনটি আবার মসজিদ এর স্থাপত্য নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। নীলফামারী জেলার চিনি মসজিদ তেমনি ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ।

এই মসজিদের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু শহরের ইসবাগ এলাকায় ছন ও বাঁশ দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় টিন দিয়ে এটি রূপান্তরিত করা হয়। এলাকার মানুষরা মাসিক আয়ের একটি অংশ দিয়ে মসজিদের জন্য ফাণ্ড গঠন করে। পরবর্তীতে শঙ্কু নামের এক হিন্দু ব্যক্তি দৈনিক ১০ আনা মজুরিতে মসজিদ নতুনভাবে নির্মাণ শুরু করেন। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে থাকেন। মসজিদের বডিতে চিনামাটির থালার ভগ্নাংশ, কাঁচের ভগ্নাংশ বসিয়ে ইট ও সুরকি দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে চিনি করা বা চিনি দানার কাজ করা। এ থেকেই এই মসজিদের নাম চিনি মসজিদ বা চীনা মসজিদ। আর এই চিনামাটির এসব কারুকার্য নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতা থেকে। মসজিদের নকশা করেন মো. মোখতুল ও নবী বক্স। মসজিদের কারুকার্যে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, একটি বৃত্তে একটি ফুল, চাঁদ-তারা মসজিদের বডিতে খচিত রয়েছে। এ মসজিদ তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

এই মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ে খুব সহজে। ইতোমধ্যে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। এই চিনি মসজিদের সারা অবয়ব রঙ্গীন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত। ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের ৪৫টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ইতিহাস রয়েছে। কারুকার্যময় স্থাপত্যের নিদর্শন এই চিনি মসজিদ দেশের ক’জন রাষ্ট্র প্রধানও পরিদর্শন করে গেছেন। ইসলামের মহিমা প্রচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সৈয়দপুর চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মসজিদটির ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বামে একটি ইমামবারা রয়েছে। আর পশ্চিমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গাঁ ঘেঁষে ১২টির মত দোকানঘর। এসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লীদের চাঁদা মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস।

এই মসজিদটির কারুকার্যে সকলেই সবাই মুগ্ধ।এই মসজিদটির দেয়াল অঙ্কিত ফুলদানি, ফুলের ঝাড়,গোলাপ ফুল এবং মসজিদটিতে অসংখ্য মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।নিজ চোখে না দেখলে কেউই এই মসজিদটির সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবে না।এই মসজিদটি থেকে ২ কি.মি পিছনে খ্রিস্টান একটি প্রাচীন কবরস্থান অবস্থিত রয়েছে। এই মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিনে রয়েছে ২ টি ফটক। এই মসজিদটি চকচকে রঙিন পাথরে আবরিত এবং বারান্দা সাদা মোজাইকে বাঁধানো। এই মসজিদটির সৌন্দর্য সারা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে। যুগ যুগ ধরে এটির চর্চা এখনো সৈয়দপুরকে খ্যাত করছে।

যেভাবে আসবেন :

ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি সৈয়দপুরে আসতে পারবেন। এছাড়া গাবতলী, কলেজ গেট, মহাখালি থেকে সরাসরি অনেকগুলো বাস সার্ভিস চালু আছে। আরামদায়ক ভ্রমণে আকাশ পথে বিমানযোগে সৈয়দপুরে চলে আসতে পারেন।