কোন দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে ধেরে রাখার জন্য জাদুঘর তৈরি হয়। জাদুঘরে মূলত উক্ত দেশের কিংবা জাতি গোষ্ঠীর সকল ইতিহাসের সাক্ষ্য এমন মুল্ল্যবান বস্তু প্রদর্শন করে হয়। যা দেখে সাধারন মানুষ তাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে জানতে পারে। বাংলাদেশেও অনেক জাদুঘর রয়েছে। সেই সব জাদুঘের প্রদর্শিত বস্তু গুলো বাংলার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলাতেও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর নামে তেমনি একটি জাদুঘর রয়েছে যা বাংলাদেশের অন্যতম একটি জাদুঘর হিসাবে বিবেচিত।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর হিসাবে বিবেচিত হয়। রাজশাহী মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে হেতমখাঁ সদর হাসপাতালের সামনে প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর অবস্থিত, যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। এটি প্রত্ন সংগ্রহে সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর। নাটোরের গিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদার কুমার শরৎকুমার রায়, খ্যাতনামা আইনজীবি ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ্রের প্রচেষ্টায় ১৯১০ সালে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এরা ছাড়াও তৎকালীন অনেক খ্যাতিমান পন্ডিত ব্যক্তিগণ এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- কুমার শরৎ কুমার রায়, রমাপ্রসাদ চন্দ, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, ড. রাধাগোবিন্দ বসাক, ড. উপেন্দ্রনাথ ঘোষাল, ননীগোপাল মজুমদার, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. ইতরাত হোসেন জুবেরী, অধ্যাপক মীরজাহান, ড. গোলাম মকসুদ হিলালী, ড. আবু ইমাম, ড. এ.বি.এম. হোসেন, প্রফেসর মুখলেসুর রহমান, ড. কসিমুদ্দীন মোল্লা, ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ। বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন শত শত বিদ্যার্থী, পর্যটক এবং জ্ঞানান্বেষীগণ এই প্রাচীন জাদুঘরটির বিশাল ও বৈচিত্রময় সংগ্রহ দেখেতে আসেন এবং মুগ্ধ হন। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশাসন এটি পরিচালনা করে।
এই জাদুঘরে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধু মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি সহ বিভিন্ন সভ্যতার অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুত। মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা তাদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্যেখযোগ্য। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযর্ন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এই জাদুঘরে রয়েছে।
বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক নিদর্শন। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি, ৬১টি লেখ চিত্র দুই হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, ৯শ’র বেশি পোড়ামাটির ভাস্কর্য-পত্র-ফলক, প্রায় ৬০টি অস্ত্রশস্ত্র, প্রায় ৩০টি আরবি-ফার্সি দলিল, মোগল আমল থেকে ব্রিটিশ আমল পযর্ন্ত বিভিন্ন প্রকারের রৌপ্য-ব্যোঞ্জ-মিশ্র ধাতুর প্রায় ৪০০টি মুদ্রা রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫০০০ পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত হয়েছিলো। এসব সংগ্রহ মোট ৮টি গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করা আছে জনসাধারনের জন্য।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি রাজশাহী জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। জাদুঘরটি রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারের কাছে অবস্থিত। প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে রাজশাহী পৌছাতে হবে। এরপর আপনি বাস অথবা রিকশায় গবেষণা কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন।