বিনত বিবির মসজিদ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1100

ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মসজিদগুলোর মধ্যে বিনত বিবির মসজিদ অন্যতম। এটি পুরানো ঢাকায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটির গায়ে উত্কীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে, অর্থাত্ ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। ঢাকার প্রথম মসজিদের মর্যাদা পেয়েছে নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদ।

ধারণা করা হয়, ঢাকায় এ পর্যন্ত যত প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে প্রথম মুসলিম শিলালিপি হচ্ছে এটি।  ৮৬১ হিজরিতে নারিন্দা রোডস্থ এ মসজিদটির প্রথম সংস্করণ করা হয় এবং ৮৬৬ হিজরিতে বিনত বিবি ও আরাকান আলীর সমাধিস্থলে একটি মাজার স্থাপন করা হয়। মসজিদের দুটো গম্বুজের একটির গায়ে আদি ভবন প্রতিষ্ঠার সাল লেখা আছে। আরেকটি গম্বুজের লেখা অনুযায়ী ভবনটি প্রথম সংস্কারের মুখ দেখে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ)। মসজিদটি যখন প্রথম নির্মিত হয় তখন তাতে একটি মাত্র গম্বুজ থাকলেও পরবর্তীতে বাংলা ১৩৩৭ সনে মসজিদটিতে পুনঃসংস্করণ করে দ্বিতীয় গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। দুটি গম্বুজের গায়েই তাদের সংস্করণ-সাল লেখা রয়েছে।

মসজিদটি বর্গাকৃতির এবং এক গম্বুজবিশিষ্ট। এর অভ্যন্তরভাগের পরিমাপ প্রতিদিকে ৩.৬৬ মিটার। মসজিদটির ছাদ গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং গম্বুজটি সরাসরি ছাদে স্থাপিত। মসজিদের দেওয়ালগুলি ১.৮৩ মিটার পুরু। এর পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে মোট তিনটি প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেওয়ালের পেছনের দিকে একমাত্র মিহরাবটি অভিক্ষিপ্ত। আদিতে চার কোণে প্লাস্টার বিহীন বক্রাকৃতির ‘ব্যাটেলমেন্ট’-যুক্ত চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ ছিল। বারবার সংস্কার এবং পরবর্তী সময়ে সংযোজনের ফলে এর বাইরের প্রকৃত অবয়ব সম্পূণরুপে পাল্টে গেছে। পূর্বের বক্রকে সোজা করা হয়েছে। মসজিদটির দক্ষিণ পার্শ্বে আর একটি এক গম্বুজবিশিষ্ট কক্ষ এবং পূর্ব ও দক্ষিণে একটি বারান্দা সংযুক্ত করা হয়েছে। বারবার পুরু আস্তরণের ফলে মসজিদের পোড়ামাটির অলঙ্করণ এখন আর পরিলক্ষিত হয় না। মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হলেও এতে প্রাক-মুগল সালতানাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ বেশ ভালভাবেই লক্ষ্য করা যায়। এলোমেলোভাবে পরিবর্তন সাধন করার কারণে সালতানাতের নিদর্শনগুলির পরিচয় ও সৌন্দর্য অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বখত বিনত মসজিদটি তার উৎকর্ষ ও মৌলিকত্বের জন্য টিকে গিয়েছিল। এর স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যাবলি হলো অষ্টকোনা পার্শ্ব স্তম্ভ, বর্গাকার কক্ষের ওপর অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিকে খিলানের ব্যবহার, সাদামাটা অলঙ্করণ, প্লাস্টারে ঢাকা, বাঁকানো কার্নিশ প্রভৃতি। এ মসজিদের উত্তর ও পশ্চিম ফাসাদ এবং প্রথম গম্বুজটি মসজিদটির সুলতানি যুগের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে।

কীভাবে যাবেন:

ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে পুরান ঢাকা আসা যায়। সেখান থেকে রিক্সা করে বিনত বিবির মসজিদ যাওয়া যায়। পুরান ঢাকার ৬ নং নারিন্দা রোডে বিনত বিবির মসজিদ অবস্থিত।