বানরের রাজ্য

2313

আড়িয়াল খাঁ নদবেষ্টিত মাদারীপুর অঞ্চল এক সময় বনজঙ্গলে পূর্ণ ছিল। স্থানীয়দের ধারণা সুন্দরবন একসময় বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।এই বাকেরগঞ্জ হয়ে কিছু বানর মাদারীপুরে আসে। ধারনা করা হয় ১৯২০ সালের দিকে সহায়ক পরিবেশ থাকায় বানর বংশবৃদ্ধি করতে করতে এর সংখ্যা দাড়িয়েঁছে ২০ হাজারের বেশি।সে সময় মাদারীপুরর কুলপদ্বী,পুরন শহর ও চরমুগুরিয়ার এলাকায় বানরের বিচরণ ছিল।দেশ ভাগের আগে এ অঞ্চলে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। অনেকে বানরকে দেবতা মনে করে কলা,ফলমূল, মোয়া, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি খেতে দিত। আস্তে আস্তে এই বানরগুলো চরমুগুরিয়া বন্তরে মানুষের মাঝে থাকতে শুরু করে।

৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বন্দরে বানরেরা মানুষের একান্ত পড়শী। ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট এমনকি হাটের মধ্যে অবাধে বিচরণ করত বানরগুলো। বানরগুলোকে চরমুগরিয়া বন্দরের কালীবাড়ি, স্বর্নকারপট্টি, জেটিসি, আদমজী, চাল আড়ত ও চৌরাস্তা এলাকায় বেশি বিচরণ করতে দেখা যায়। জেটিসি ও আদমজীর বানরগুলো পরিত্যক্ত পাট গুদামে এবং চৌরাস্তা নদী পাড়ের বানরগুলো জেসম একাডেমীসহ আরও দুটি পরিত্যক্ত দুটি পাট গুদামে থাকে। বর্তমানে মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া বন্দরে দেড় হাজার বানর কোন রকমভাবে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছ। সরেজমিন দেখা গেছে, যেখানে সব চেয়ে বেশি বানর দেখা যায় সেখানে কোন বানর নেই। এলাকার লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানা যায় যে এখানে (পাটের পুরারো গুদাম ঘরে) বানর থাকেনা খাবারের অভাবে তারা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা বাড়ির ভিতরে গিয়ে খাবার দিলে কিছু বানর দেখতে পাই। পরে জানা গেল এভাবেই সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বানর সম্প্রদায়। কেউ গাছে ঝুলছে, কেউ বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। আবার কেউ বাচ্চার মাথার উকুন মেরে দিচ্ছে।চরমুগরিয়া ডিগ্রী করেজের পাশে একটি খোলা জায়গায় শতাধিক বানর বসে রয়েছে। কোনটি খুটে কুটে মাঠের ঘাস ছিড়ে খাচ্ছে, কোনটি আবার খাবারের জন্য হাহাকামা বানরকে র করছে। খাবার না পেয়ে মায়ের সঙ্গে শিশু বানরও শীর্নকায় হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা জেটিসিন এলাকাতেও।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, চরগুগরিয়া বন্দরে দেড় হাজারের বেশি বানর রয়েছে। যে সব জায়গায় খাবার দেয়া হতো সেখানে নির্ধারিত সময়ে অসংখ বানর এসে হাজির হয়। এ ছাড়া দর্শনার্থীরা কোন খাবার নিয়ে আসামাত্রই চারদিক থেকে অসংখ্য বানর তাদের ঘিরেন ধরে। দর্শনার্থীদের দেওয়া মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কুট, বাদামসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে কাড়াকড়ি করছে । মাদারীপুর সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ ও ৯৮ সালের বন্যায় এখানকার বানরকুলের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। খাদ্যাভাবে বেশ কিছু বানর মারা যায়। ১৯৯৮ সালে বান্যায় দুর্গত এলাকায় ত্রানের পাশাপাশি এই বানরদের জন্য ৩ টন খাদ্য বরাদ্দ হয়।