মৌর্য,সেন,পাল, মোঘল বংশের রাজাদের রাজত্বের স্মৃতি বিজরীত রাজশাহী জেলা। বাংলার অতি প্রাচীন জনপথ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জনপথ এই রাজশাহী। বিখ্যাত এবং সুস্বাদু সব আম চাষের জন্য এই জেলাটির এক অনন্য খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার দিক থেকে জেলাটি যেমন সবার নজর কারে তেমনি পর্যটন ব্যবস্থার দিক থেকেও প্রাচীন জনপদের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জেলাটি সকলের নিকট আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু। রাজশাহী জেলার পর্যটন আকর্ষনীয় স্থাপনা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাঘা মসজিদ।
বাংলাদেশ মসজিদ এর দেশ। এই দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা, গ্রামের প্রতিটি স্থানেই মসজিদ লক্ষ্য করে যায়। সেই মসজিদ গুলোর বেশির ভাগ মসজিদ ইতিহাসগত দিক থেকে ঐতিহ্যবাহী। বাঘা মসজিদ তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ যা রাজশাহী শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বাঘা উপজেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। একটি উঁচু টিলার উপর টেরাকোটা অলংকরণে সমৃদ্ধ দশ গম্বুজ বিশিষ্ট অতুলনীয় বাঘা মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদ গুলির অন্যতম। বাংলার (গৌড়) সুলতান নশরত শাহের আমলে ১৫২৩ খৃষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মান করা হয় বলে ধারনা করা হয়। মসজিদ সংলগ্ন একটি বিশাল দীঘি রয়েছে যেখানে শীতের অতিথি পাখীদের দৃশ্য মনোমুখগ্ধকর এবং অপরূপ। মসজিদ চত্ত্বরের পার্শ্বেই রয়েছে একাধিক পীর আউলিয়াগনের মাযার অবস্থিত। প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষসহ অসংখ্য পর্যটক মসজিদ, তৎসংলগ্ন দীঘি ও মাযার দর্শন করেন। মসজিদটি ২৫৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এবং সমভুমি থেকে থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু করে মসজিদের আঙিনা তৈরি করা হয়েছে। উত্তর পাশের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মসজিদটিতে ১০টি গম্বুজ আছে । আর ভেতরে রয়েছে ৬টি স্তম্ভ। মসজিদটিতে ৪টি মেহরাব রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত ও দৃষ্টিনন্দন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফুট গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটির গাঁথুনি চুন-সুরকি দিয়ে গাথা। ভেতরে এবং বাইরের দেয়ালে মেহরাব ও স্তম্ভ রয়েছে। বাঘা মসজিদের দৈর্ঘ্য ২২.৯২ মিটার, প্রস্থ ১২.১৮ মিটার এবং উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর দেয়াল ২.২২ মিটার পুরু। মসজিদটিতে সর্বমোট ১০টি গম্বুজ, ৪টি মিনার (যার শীর্ষদেশ গম্বুজাকৃতির) এবং ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদটি চারদিক হতে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং প্রাচীরের দু’দিকে দু’টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে-বাইরে সবর্ত্রই টেরাকোটার নকশা বর্তমান। মসজিদের পাশে অবস্থিত বিশাল দিঘীও একটি দর্শনীয় স্থান। এছাড়া বাঘা মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাজার শরীফ।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি রাজশাহী জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। রাজশাহী শহরে নেমে শিরইল বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে বাঘা মসজিদে পৌছাতে হয়।