মোঘল শাসকের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মারক ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। চট্টগ্রামের অনন্য এক ঐতিহাসিক স্থাপনা এ মসজিদ। প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছরের পুরানো এ মসজিদ কালের সাক্ষী। আদি চট্টগ্রামের অস্তিত্ব ও নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনী জড়িয়ে আছে এ আন্দরকিল্লার সঙ্গে। প্রাচীন এই মসজিদের সব শিলালিপির সঙ্গে সিরিয়ার ‘রাক্কা নগর’ এর স্থাপত্যকলার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।মসজিদের মূল ইমারতের প্রবেশপথে কালো পাথরের গায়ে খোদাই করা সাদা অক্ষরে লেখা ফারসী শিলালিপিটি বসানো হয়েছিল। শুধু স্থাপত্য নিদর্শনই নয় স্থাপত্য অনন্য শৈল্পিক দিক থেকেও মসজিদটি এ অঞ্চলের এক অনন্য পুরাকীর্তি হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।
এক সময় আন্দরকিল্লা জায়গাটি মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার পর এখানকার প্রথম শাসনকর্তা নিযুক্ত হন চট্টগ্রাম বিজয়ী সেনাপতি বুজুর্গ উমেদ খাঁ। তিনি ছিলেন তৎকালীন বাংলার সুবেদার নবাব শায়েস্তা খাঁর পুত্র। উমেদ খাঁ শাসনভার গ্রহণের পর জলদস্যূদের ঘাঁটির অন্দরে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে জায়গাটির নাম হয়ে যায় ‘আন্দরকিল্লা’। চট্টগ্রাম বিজয়ের একবছর পর ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁর সহযোগিতায় বুজুর্গ উমেদ খাঁ এখানে নির্মাণ করেন ‘আন্দরকিল্লা জামে সঙ্গীন মসজিদ’।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এই মসজিদটি মোঘল রীতি অনুযায়ী তৈরি। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ত্রিশ ফুট উপরে ছোট্ট পাহাড়ের উপর এর অবস্থান। মূল মসজিদের নকশা অনুযায়ী এটি ১৮ গজ (১৬ মিটার) দীর্ঘ, ৭ দশমিক ৫ গজ প্রস্থ। প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২ দশমিক ৫ গজ পুরু। পশ্চিমের দেয়াল পোড়া মাটির তৈরি এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের তৈরি। মধ্যস্থলে একটি বড় এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা ছাদ আবৃত। ১৬৬৬ সালে নির্মিত এর চারটি অষ্টভূজাকৃতির গম্বুজগুলির মধ্যে পেছন দিকের দুটি এখনও বিদ্যমান।
মসজিদটির পূর্বে তিনটি, উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহরাব থাকলেও সাধারণত মাঝের সর্ববৃহৎ মেহরাবটিই ব্যবহৃরিত হয়ে থাকে।