পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার অন্যতম আকর্ষণ আলীর সুড়ঙ্গ বা আলীকদম গুহা। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই মাতামুহুরী-তৈন খাল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দু‘পাহাড়ের চূঁড়ায় প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ। ঝিরি থেকে দেড়শত ফুট উপরে এই গুহা। তবে প্রকৃতির অপরূহ এই গুহাকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। এলাকাবাসীর কাছে এই রহস্যগুহার নাম আলীর সুরম। সরকারি নথিপত্রে এটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে পুরাকীর্তি হিসেবে। শুধু যে সুড়ঙ্গটার নাম আলীর নামে তা কিন্তু নয়, যে পাথুরে পাহাড়ে এই গুহার অবস্থান তার নামও আলীর পাহাড়। আর উপজেলার নাম আলীকদম। এই আলীকদম, আলীর পাহাড় আর আলীর গুহা একসূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করা যায়।
আলীর সুড়ঙ্গ নামকরণের সঠিক কোনো তথ্য কারো জানা নেই। পাহাড়ি ঝিরি থেকে গুহায় উঠতে খুবই কষ্টকর। পাথর বেষ্টিত এই গুহায় কিছুদিন আগেও উঠতে হলে দড়ি বা পাহাড়ের লতা ধরে আস্তে আস্তে উঠতে হতো। পর্যটকদের এই সমস্যার সমাধানে আলীকদম সেনা জোনের উদ্যোগে তিনটি সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে পর্যটকদের আর কোনো সমস্যা পোহাতে হয় না। অনায়াসেই যেতে পারেন গুহার দর্শনে। দেখতে অনেকটা ভয়ংকর! পাহাড়ের মাঝখানে লম্বাকৃতির এই গুহাটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা। তার পাশেই আরও দু‘টি গুহা রয়েছে। যাদের দৈর্ঘ্য প্রায় একই রকম। গুহার ভেতরে অন্ধকার! টচ লাইট বা আগুনের মশাল নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। তবে সতর্কতা, গুহার ভেতরে রয়েছে ছোট বড় চাপা বাদুর রয়েছে। এই বাদুড় গুলো এদিক থেকে ওদিক উড়ে যাওয়ার সময় ভয় পেতে পারেন। তবে কারো কোনো ক্ষতি করে না এরা।
গুহার মধ্যে তিনটি চেম্বার লক্ষ্য করা যায়। শেষ চেম্বারটি অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই চেম্বারের ছাদ নিচের ভূমিতে এসে মিশেছে। গুহায় বছরজুড়ে পানি চুয়ায়। ফলে গুহার ভূমিতে হালকা পানি জমে থাকে। এই গুহাটি কত প্রাচীন-তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। চাকমা রূপকথা এবং উপাখ্যানে এই গুহাকে নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে।
যেভাবে যাবেন :
চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার থেকে সড়কপথে আলীকদম। তারপর সেনাজোন থেকে নৌকায় আলীর সুড়ঙ্গে। সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। সুড়ঙ্গে ঢুকতে হলে স্থানীয় আদিবাসীদের গাইড হিসেবে নিতে হবে।