আদমজী জুটমিল

1528

একসময়কার বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিলো পাট। তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই এ. ওয়াহেদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ আদমজী পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যৌথভাবে আদমজী জুটমিল প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়েই আদমজী জুট মিল পৃথিবীর অন্যতম জুট মিল এবং এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ কারখানায় পরিনত হয়। এখানকার উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্য দেশের চাহিদা পূরণ করে চীন, ভারত, কানাডা, আমেরিকা, থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো। প্রাচ্যের ডেন্ডি নামে খ্যাত আদমজী জুট মিল্‌স নারায়ণগঞ্জ শহরে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সমৃদ্ধ এক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এশিয়ার বৃহত্তম সেই আদমজী জুট মিল এখন শুধুই স্মৃতি।

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়ায় আদমজী জুট মিল্‌স গড়ে ওঠে ২৯৭ একর জমির ওপর। এক হাজার ৭০০ হেসিয়ান ও এক হাজার সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওই সময় এই মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর যাত্রা শুরুর পর পরই আদমজী জুট মিল্‌স লিমিটেড শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগ বাড়ায় ৭ কোটি টাকায়। এরপর মিলে  বসানো হয় তিন হাজার ৩০০টি তাঁতকল।

১৯৭০’র দশকে প্লাস্টিক ও পলিথিন পাটতন্তুর বিকল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে আদমজী পাট কলের স্বর্ণযুগের অবসান হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকে ১৯৮০ এর দশকের কয়েকটি বছর ব্যতীত অন্য সব বছর এটি বিপুল পরিমাণে লোকসান দেয়।শ্রমিক ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বাধা সত্ত্বেও ২০০২ সালের ৩০ জুন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এশিয়ার বৃহত্তম এই পাটকল। এখন ওই স্থানে গড়ে উঠেছে আদমজী ইপিজেড। বর্তমানে এই ইপিজেডে চাকরি করছে ৪৮ হাজার শ্রমিক।

সর্বশেষ মিলটিতে ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চাকরি করতেন। মিলটি বন্ধ করার সময় তাদের ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী যেকোনো বাসে চেপে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। সেখান থেকে আদমজী নগর পৌঁছালেই আদমজী জুটমিল পায়া যাবেন।