আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের বিখ্যাত অন্যতম হিন্দু মন্দির। এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় শহর কক্সবাজার থেকে ১২ কিমি দূরের বঙ্গোপসাগরের মধ্যে দ্বীপ মহেশখালীতে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত, যা সমুদ্র-সমতল থেকে প্রায় ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে। এই মন্দিরটি মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত, যা সমতল থেকে ৬৯টি সিঁড়ি ভেঙে ঊঠতে হয়।
আদিনাথের গোড়াপত্তন কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে ত্রেতাযুগে। এর একটি ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, রামায়ণ, শিবপুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়। তবে শ্রী শ্রী আদিনাথ এর আবিস্কার সর্ম্পকে স্থানীয়ভাবে একটি জনশ্রুতি রয়েছে। এলাকাবাসীর মতানুসারে এই তীর্থ আবিস্কৃত এবং মর্যাদা পায় নূর মোহাম্মদ শিকদার নামক একজন সচ্ছল মুসলিম ধর্মালম্বীর মাধ্যমে। মৈনাক শিখরেই আদিনাথ মন্দিরের পাশে অষ্টাভূজারূপী দেবী দুর্গার একটি মন্দির রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে নূর মোহাম্মদ শিকদারই অষ্টাভূজাকে সদূর নেপাল থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নাদেশ পান।
আদিনাথ মন্দির নির্মাণশৈলীতে নাথদের সম্পৃক্ততা সুস্পষ্ট। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১০.৫০ মিটার, প্রস্থ ৯.৭৫ মিটার, উচ্চতা ৬ মিটার। অভ্যন্তরের দেয়াল ১.০৫ মিটার এবং বহির্দেয়াল ০.৬০ মিটার চওড়া। মন্দিরটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরের অংশ প্রাচীন। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি অংশ তৈরি করা হয়েছে। উত্তর অংশের প্রথম ভাগে ৩.৩৫ মিটার বর্গাকৃতির দুটি পূজাকক্ষ, পূর্বকক্ষে আদিনাথ বাণলিঙ্গ শিবমূর্তি এবং পশ্চিমকক্ষে অষ্টভুজা দুর্গামূর্তি। সম্মুখের প্রবেশপথ ধনুকাকৃতির। উত্তর ও দক্ষিণের অনুরূপ প্রবেশপথ ইটের গাঁথুনি‘ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে দুটি জানালা। দুটি কক্ষের উপরিভাগে অর্ধগোলাকার পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতিতে স্থাপিত দুটি গম্বুজ।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা-কক্সবাজারের বাসে চকরিয়া নেমে সেখান থেকে মহেশখালীর বাস যায়। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে মহেশখালী সরাসরি বাস যায়, তবে সেগুলো খুব একটা আরামদায়ক নয় বলেই কক্সবাজারের বাসে যাত্রা করাটা ভাল। অবশ্য চকরিয়া নেমে আবার সেই চট্টগ্রাম-মহেশখালীর বাসই ধরতে হবে। তবে সেখানে পথ কম, ঘণ্টাখানেকেই মহেশখালী পৌঁছানো যায়।