তারুণ্যের পেশা এয়ার হোস্টেস

1200

তারুণ্যের পেশা এয়ার হোস্টেস

কেবিন ক্রু বা এয়ার হোস্টেস। তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বপ্নময় এক পেশা। এ পেশায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে হালের ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড তরুণরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হবেনই-বা না কেন! শুধু আর্থিকভাবেই মর্যাদার নয়, বরং ভিন্ন রকম অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও মেলে এই পেশায়। পাখির মতো ‘উড়াল দেয়া যায় আকাশে’। বিমানে করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো যায়। এ পেশাটায় নিজেকে যুক্ত করতে চাইলে গ্ল্যামার থাকা চাই। তবে শুধু গ্ল্যামারই এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস, আর ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতাও সমান প্রয়োজনীয়। স্মার্টনেস, যোগাযোগ দক্ষতা, ভাষাজ্ঞান সর্বোপরি মনের ভেতরে একটা সৌন্দর্যবোধ থাকা চাই এ পেশায় আসতে চাইলে। উদ্যামীদের ঝোঁক বাড়তে থাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পেশা। আর স্বভাবতই, এখানে বাড়ছে প্রতিযোগিতাও।

এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে সমবেত করার জন্য যে সুদীর্ঘ প্রস্তুতি অনিবার্য- তাও নয়। বরং কিছু প্রশিক্ষণ কোর্স করেও বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি দেশী-বিদেশী এয়ারলাইনগুলোতে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন আপনি। এটি এমনই এক আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্র, যার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের অন্যান্য দেশের এয়ারলাইন্সগুলোতেও সফল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা অবারিত। যেমনটি জানান কাতার এয়ারওয়েজের এয়ার হোস্টেস বাংলাদেশী মিনারা মজুমদার। ‘এয়ারলাইন্সে কাজ করা যেমন মর্যাদার তেমনি অ্যাডভাঞ্চারাস। এখানে রয়েছে গ্লোবাল ক্যারিয়ার। আপনি এ কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে গোটা বিশ্ব হবে আপনার কর্মক্ষেত্র। সেই সঙ্গে রয়েছে অবারিত সুযোগ-সুবিধা। উচ্চ বেতন কাঠামো, চিকিৎসা ভাতা, ফ্রি থাকা-খাওয়া, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘোরাঘুরি এসব সুযোগ রয়েছে এখানে’- বলেন মিনারা।
যোগ্যতা

এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্র হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নিতে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে ভালো। সেই ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে ন্যূনতম বি গ্রেড এইচএসসি কিংবা ‘এ’ লেভেল উত্তীর্ণ হতে হবে। এ হল ন্যূনতম যোগ্যতা। তবে গ্র্যাজুয়েশন আর মাস্টার্স করা থাকলে তো সোনায় সোহাগা। কেননা, কোনো কোনো এয়ারলাইন্স কোম্পানি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম মাস্টার্সও চেয়ে থাকে। বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা শামীম হাসান এ বিষয়ে বলেন, স্মার্টনেস ও ভালো ইংরেজি বলার দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্র পেশার প্রতিযোগিতায়। এছাড়া, উপস্থিত বুদ্ধি, ধৈর্য ও সহনশীলতা, সুন্দর আচরণ, যে কোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, বিরক্তিকর মুহূর্তেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ক্ষমতা- এ পেশায় এগুলো মৌলিক গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
দেশে ৩৭ এয়ারলাইন্স বিদেশে সাড়ে ৫ হাজার

বাংলাদেশে বর্তমানে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ৩৭টি এয়ারলাইন্স কোম্পানি রয়েছে। দেশে আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, নভো এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ইত্যাদি। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ৫ হাজার ৫১০টিরও বেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে রয়েছে এয়ার হোস্টেজদের জন্য কাজ করার লোভনীয় সব অফার। এশিয়া মহাদেশের মালয়েশিয়া, থাই এয়ার ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং মিডল ইস্টের সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ইতিহাদ, এমিরেটস ও গালফ এয়ার এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কেবিন ক্রুদের এত বেশি চাহিদা যে, অন জব ট্রেইনিং করার সময়েই ভালো চাকরির অফার পেয়ে থাকেন ডিগ্রিধারীরা।
কাজের ধরন

কেবিন ক্রুর কাজ হচ্ছে বিমানের যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটি খেয়াল রাখা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া। এছাড়া বিমানের ওঠা-নামা-সংক্রান্ত সব তথ্য পাইলটের হয়ে যাত্রীদের জানাতে হবে এয়ার হোস্টেজকে, অনেকটা দূতের মতো। পরিচ্ছন্নতা, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইকুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড আগে থেকেই ঠিক রাখাও কেবিন ক্রুর মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, আসন দেখিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বিমান আকাশে ওড়ার আগে তাদের সিটবেল্ট লাগাতে বলা এবং কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা।
বেতন ও অন্যান্য সুবিধা

বিদেশী এরির‌্যাং এভিয়েশন লিমিটিডের (ইয়ংগুনভিত্তিক) কেবিন ক্র শাকিল মাহমুদ। তার মতে, এয়ার হোস্টেজ পেশাটি সম্মানের ও গ্ল্যামারাস। তিনি জানান, ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন কেবিন ক্র ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাবেন। কোনো কোনো বিদেশী এয়ারলাইন্স আরও বেশি টাকা দিয়ে থাকে। তারা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিয়ে থাকে। পাশাপাশি পৃথিবীর যে দেশেই যান না কেন, সেখানে এয়ার হোস্টেজের জন্য থাকা-খাওয়া ও ফ্লাইং আওয়ারভিত্তিক ভাতা। এছাড়া অন্যান্য পেশার মতো এখানেও আবাসন খরচ, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিকেল ভাতাসহ রাজ্যের সুযোগ-সুবিধা তো রয়েছেই। সপ্তাহপ্রতি গড়ে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আর মাসে সর্বোচ্চ ১২০ ঘণ্টা ফ্লাই করার সুযোগ থাকে।
কোথায় নেবেন প্রশিক্ষণ

ইউনাইটেড কলেজ অব অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জানান, এয়ার হোস্টেজ পেশায় ক্যারিয়ার গঠনে চাই অনুমোদিত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা। ইউনাইটেড কলেজ পাইলট, কেবিন ক্রু, ই-টিকিটিং ও উড়োজাহাজ চলাচল বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনে দেশের শিক্ষার্থীদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এয়ার হোস্টেজ কোর্স করানো হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। যেমন- উত্তরার ইউনাইটেড কলেজ অব অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট : কোর্সের মেয়াদ তিন মাস। ক্লাস : সপ্তাহে তিন দিন। ফি ২০ হাজার টাকা। অ্যারোনটিক্যাল ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ : কোর্সের মেয়াদ ৩ মাস। ক্লাস সপ্তাহে তিন দিন। ফি ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেই এ-সংক্রান্ত ডিগ্লোমা কোর্স করানো হয়ে থাকে। এই কোর্স করে আপনি এয়ার হোস্টেসে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
এয়ার হোস্টেস কেবিন ক্রু কোর্সে যা শেখান হয়
এটি হল ট্যুরিজম ও এয়ারলাইন্সের কাস্টমার রিলেশন ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্পেশালাইজড কোর্স যেখানে কাস্টমার কেয়ার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক যেমন প্যাসেঞ্জার সার্ভিস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, এয়ারক্রাফট সিকুরিটি অ্যান্ড সেফটি, কাস্টমার রিলেশনস শেখানো হয়।

নিউজ সোর্স : যুগান্তর

যেকোনো দেশের এয়ার টিকেট, হোটেল বুকিং, হেলিকপ্টার সার্ভিস, টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং এবং প্যাকেজ ট্যুর করে থাকি। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন নিচের ঠিকানায়।

zooFamily (community of aviation & travel)

রোড ৩, হোল্ডিং ৩, সুইট ৩৪,হ্যাপি আর্কদিয়া শপিং মল,ধানমণ্ডি,ঢাকা ১২০৫, বাংলাদেশ।

মোবাইল নাম্বার: ০১৯৭৮৫৬৯২৯৪