বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের জেলা পটুয়াখালী শুধু মাত্র কুয়াকাটার জন্যই বিখ্যাত নাহ। এই জেলাতে আরও অনেক দর্শনীয় স্থাপনা এবং ইতিহাস বিজড়িত স্থান রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি সুন্দরী কমলার দিঘি। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর তীরে ‘সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি’অবস্থিত। ৫২৬ বছর আগের সেই দীঘি এখনো কালের সাক্ষী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চন্দ্রদ্বীপ রাজার শৌর্যবীর্যের স্মৃতি এই কমলা রানীর দীঘি। কথিত আছে, রাজা জয়দেবের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। কমলা সুন্দরী ও বিদ্যাসুন্দরী নামে দুই মেয়ে ছিল। কমলা ছিলেন বুদ্ধিমতি। পিতার নির্দেশে তিনি রাজ্য পরিচালনা ও অস্ত্র চালনা শেখেন। পরিণত বয়সে রাজা কমলাকে বাবুগঞ্জ থানার দেহেরগতি গ্রামের উষাপতির পুত্র বলভদ্র বসুর সঙ্গে বিয়ে দেন। বলভদ্র বসু ছিলেন বিদ্যোত্শায়ী ও বিভিন্ন শাস্ত্রে পণ্ডিত এবং যুদ্ধ বিদ্যায় অতুলনীয়। বলভদ্র বসু অবশ্য দেখতে কালো ছিলেন, তাই প্রজারা তাকে কালো রাজা বলতেন। বিয়ের পর কমলা স্বামীসহ কচুয়াতেই বসবাস করতেন। রাজা জয়দেব তার মৃত্যুর সময় কমলাকে পরবর্তী রাজা নিযুক্ত করেছিলেন। ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে কমলা সিংহাসনে আরোহণ করেন।
কমলা রানীর দীঘির পাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪০-৫০ ফুট। এতবড় এবং উঁচু পাড় বিশিষ্ট দীঘি তখন এ বঙ্গে ছিল প্রথম। দীঘি খননে তখনকার দিনে মোট ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। কথিত আছে, দীঘি খনন হলেও দীঘিতে পানি উঠছিল না। অথচ দীঘির চার পাশে ছিল পুকুর, ডোবা-নালা, খাল-বিল পানিতে ভর্তি। পানি উঠাতে পূজা দেওয়া হয়, কাঙালি ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারপরেও পানি ওঠেনি। এ জন্য কমলা রানীসহ সভাসদ ও প্রজাদের চোখে ঘুম ছিল না। একদিন রাতে কমলা রানী পালংকে ঘুমাচ্ছিলেন। তখন কে যেন ফিস ফিস করে তার কানে কানে সাবধান করে দিয়ে যায়— যদি না সে পুকুরের ভিতর খালি পায়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেঁটে না আসেন— তাহলে কিছুতেই এক ফোঁটা পানিও ওঠবে না। তখন কমলা রানী পূজা অর্চনা সেরে খালি পায়ে দীঘিতে হাঁটা শুরু করেন। তিনি দীঘির মাঝে পৌঁছাতেই পানি ওঠা শুরু করে। চোখের নিমিষে কমলার হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। কমলা অবশ্য জিদ ধরে ছিলেন। পানি কোমর পর্যন্ত না ওঠা অবধি তিনি পাড়ে উঠবেন না। এই কাজ করতে গিয়ে পানি এতটাই উঠে যায় যে কমলা আর সেই পানি থেকে তীরে উঠতে পারেননি। তিনি ওই পানিতে ডুবে হারিয়ে যান। সেই কমলা সুন্দরী দীঘির উত্তর পাড় দিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে চলে গেল। ৫২৬ বছর আগের সেই খাল ও দীঘিটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে নানা স্মৃতি বহন করছে।
কিভাবে যাবেনঃ-
নদ-নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত এই জেলায় যাতায়াতের জন্য নৌ-পথই সবচেয়ে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। এছাড়া সড়ক পথেও এই জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যেসব গাড়ি ছেড়ে যায় গুলিস্তান থেকে। বাউফল থেকে সরাসরি কালাইয়া লঞ্চ ঘাট এসে কোট পাড় যেতে হবে। আর কোট পাড়া আসে পৌঁছালেই পেয়ে যাবেন ‘সুন্দরী কমলা রানীর দীঘি।