এক ইতিহাসখ্যাত নগরী হচ্ছে। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ রাজশাহীর জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল, ইংরেজরা এ অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চল বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীদের দ্বারা শ্বাসিত হয়েছে বলে এখানে শাসকগোষ্ঠীদের তৈরি অনেক স্থাপনা রয়েছে। সেই স্থাপনা গুলো আজও তাদের নিজস্ব মহিমায় ঐতিহ্যকে বুকে ধারন করে দাড়িয়ে আছে। এই সকল স্থাপরা জন্যই পর্যটন গতদিক থেকে রাজশাহী জেলাটি তার আপন মহিমায় অনুন্নত। অন্যতম একটি স্থাপনা হল বড়কুঠি।
রাজশাহী জেলাতে ব্রিটিশ উপনিবেশিকের ইতিহাস সমৃদ্ধ অন্যতম একটি স্থাপনা হল বড়কুঠি। সুনির্দিষ্টভাবে এই ইমারতের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা না গেলেও বিভিন্ন সুত্রের বিচারে এর নির্মাণকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বলে ধারণা করা হয়ে থেকে। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের বাবসাকেন্দ্র ছিল বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডাচরা ভারতে তাদের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮১৪ সালে ইংরেজদের সাথে একটি চুক্তি করে বড়কুঠিসহ ভারতের সকল বাবসা কেন্দ্র ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তর করেছিল।
বড়কুঠির দায়িত্ব গ্রহন করে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত তারা এটিকে তাদের বাণিজ্যিককেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই বড়কুঠি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসাবে ব্যবহার করা আরম্ভ হয়। বড়কুঠি স্থাপনাটি সাহেব বাজার এবং রাজশাহী কলেজের দক্ষিণে এবং পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত।
ইষ্টক নির্মিত এবং সমতল ছাদ বিশিষ্ট এই ইমারতটি আঠার শতকের প্রথমার্ধে (১৭২৫ সনের পূর্বে) ওলন্দাজ রেশম ব্যবসায়ীদের নির্মিত এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি হিসাবে বিবেচিত। কুঠিটির বহির্ভাগ এর দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার (৮২-০) এবং প্রস্থ ১৭.৩৭ (৬৭-০) মিটার। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ইমারতটি বিভিন্ন আয়তনের মোট ১২ টি কক্ষে বিভক্ত হয়েছে। দ্বিতলে একটি সভাকক্ষসহ ৬টি কক্ষ আছে। কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ৯.৬০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬.৩০ মিটার আয়তন বিশিষ্ট আয়তাকার সভাকক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে বারান্দা (উত্তরের বারান্দা ৯.৬০ ও ৫.৮৫ মিটার এবং দক্ষিণের বারান্দা ৯.১৮ ও ৫.৮৫ মিটার আয়তন বিশিষ্ট) এবং কক্ষের পশ্চিমদিকে দুটি এবং পূর্ব দিকে এক সারিতে তিনটি কক্ষ বিদ্যমান রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ওলন্দাজ বাবসায়িরা জরুরী সময়ে ইমারতটি দুর্গ হিসাবে ব্যবহার করে শুরু করেন। এজন্য ইমারতের ছাদে এবং নিচে বেশকটি কামান শত্রুদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকত। ১৮৩৩ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে আসলে কামানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। এখানকার তিনটি পুরাতন কামান এখনও রাজশাহী পুলিসলাইন এ এখনও সংরক্ষিত আছে। এই বড়কুঠিতেই বাংলার কৃষকদের ওপর নীলকর ইংরেজরা অমানুষিক নির্যাতন চালাত। এই দোতলা ভবনটার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটো ঘোরানো সিঁড়িঁ রয়েছে। এই সিঁড়িঁ দুটো ভবনটার মাটির নীচে চলে গেছে। আর মাটির নীচে রয়েছে এক বিশাল বড় রুম আছে। এই মাটির নীচের রুমের ভিতর দিয়ে পদ্মা নদীর তলা দিয়ে এক বিশাল বড় একটা রাস্তা ছিল। রাস্তাটি এমনি ছিল যে এই রাস্তা দিয়ে নাকি একসাথে ১০টা ঘোড়া দৌড়াতে পারতো। আর এ পথটার শেষ মাথা ছিল বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার রাজবাড়ী পর্যন্ত দীর্ঘ। এখন অবশ্য কতৃপক্ষ সিঁড়িঁ দুটোর নীচের দিকে অর্ধেক প্রাচীর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে রেখেছে জনসাধারনের জন্য।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি রাজশাহী জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়। রাজশাহী শহর থেকে রিক্সা যোগে এই স্থাপনাটিতে পৌঁছানো যায়।