জ্বীনের মসজিদ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1571

ঐতিহাসিক জ্বীনের মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ লক্ষীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮/৯ শ’ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। প্রাচীন এই মসজিদটি লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত। আনুমানিক অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয়েছে। প্রায় ২শ’ বছর আগের মেঘনা ও খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর মোহনাস্থল লক্ষ্মীপুর। রায়পুর উপজেলার এ অঞ্চলটা ছিল তখন জনশূন্য বিস্তৃত চরাঞ্চল। এখানে নির্মিত হচ্ছিল নয়নাভিরাম এ মসজিদটি। কেউ কেউ বলেন, অতি স্বল্প সময়ে একটি বিশেষ ডিজাইনের এ মসজিদটি নির্মাণের ফলে এটিকে জ্বীনের মসজিদ বলা হয়।

মসজিদটির সামনে সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপিতে একে ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’ বলা হয়েছে। সে সময়ে এখানে আগমন ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহান ধর্ম সাধকদের। তখন রায়পুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মৌলভী আবদুল্লাহ। সময়টি ছিল বাংলা ১২৩৫ সাল। জন্মের পর শিশু আবদুল্লাহর মধ্যে ব্যতিক্রমী জীবন লক্ষ্য করা যায়। যখন সে কথা বলা শেখে তখন থেকেই তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পায়। কৈশোরে ধর্মীয় শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ভারতের দেওবন্দ নামক স্থানে মাদরাসায় দারুল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে দীর্ঘ ১৭ বছর ওলামায়ে কেরামের সান্নিধ্যে থেকে উচ্চতর জ্ঞান ও দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন।

মৌলভী আবদুল্লাহ জ্ঞান আহরণ শেষে দেশে ফেরার পথে দিল্লীতে কিছুদিন অবস্থান করেন। এ সময় দিল্লী শাহী জামে মসজিদের শৈল্পিক অবয়ব তাকে আকৃষ্ট করে। দেশে ফিরে অনুরূপ একটি মসজিদ তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর পবিত্র মসজিদ নির্মাণে অগ্রসর হন। দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনার ১০৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ নিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পূর্ববঙ্গের এই প্রখ্যাত মসজিদটি মাটি থেকে দশ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ জামে মসজিদটি লোকে এক নামে চেনে।

জ্বীনের মসজিদ ভিতরে কক্ষগুলোর সাথে বাইরের উঠোনের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে থাই গ্লাস দিয়ে তৈরি করা পার্টিশন। তবে এই গ্লাসের দেয়া উপর দিয়েই দেখা যায়। ১৬-১৭ ফুট উপরে ছাদ। ছাদ থেকেও ৩০ ফুট গভীর গম্বুজ। ৬-৭ টা পিলার মসজিদের ভিত। নামাজের জামাআতে পুরো মসজিদ ভর্তি হয়।’

কিভাবে যাওয়া যায়:

লক্ষ্মীপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক। সব ধরণের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় করে জ্বীনের মসজিদ যাওয়া যায়। ২০ টাকা রিকশা ভাড়া। হেঁটে গেলেও খুব বেশিক্ষণ লাগে না।