শালবন বৌদ্ধ বিহার | ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1626

শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট। ১৮৭৫ সালের শেষ দিকে বর্তমান কোটবাড়ি এলাকায় একটি সড়ক তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংশাবশেষ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। সে সময় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষকে একটি দুর্গ বলে অনুমান করা হয়েছিল।

শালবন বিহার ছাড়াও কোটবাড়ী ও এর আশপাশের এলাকায় রয়েছে নানা প্রত্নসম্পদ। এসবের মধ্যে রূপবান মুড়া, কোটালিমুড়া, ইটাখলা মুড়া, আনন্দবিহার, ভোজবিহার, রানির বাংলো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শালবন বৌদ্ধবিহারের আয়তন ৩৭ একর। অমূল্য প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ স্থানটি আগে শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেখানে ১৯৫৫ সালে খননের পর ৫৫০ ফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত একটি বৌদ্ধবিহারের ভূমি নকশা উন্মোচিত হয়। এতে ১১৫টি ভিক্ষুকক্ষ রয়েছে। লালমাই পাহাড় এলাকায় বিহারটির আশপাশে একসময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল। তাই বিহারটির নাম দেওয়া হয় শালবন বিহার।

শালবন বিহারের মধ্যভাগে একটি মন্দির ও উত্তর বাহুর মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে নান্দনিক ও কারুকার্যময় প্রবেশ তোরণ। খননে প্রাপ্ত একটি পোড়ামাটির নিদর্শন থেকে জানা যায়, দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রী ভবদেব খ্রিষ্টীয় আট শতকে এ বিহার নির্মাণ করেন। তখন বিহারটির নাম ছিল ভবদেব মহাবিহার। এ বিহার থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ প্রত্নসম্পদ ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

পুরো বৌদ্ধবিহারের মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের ফুল—কসমস, ডালিয়া, জিনিয়া, মৌচান্দা, সেলভিয়া, বোতাম, গোলাপ, সিলভিয়া, কেলানডোলা ইত্যাদি। বছরজুড়ে ঋতুভিত্তিক নানা প্রজাতির ফুলের গাছও লাগানো হয়।

৫৫০ ফুট বাই ৫৫০ ফুট পরিমাপের একটি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে। বর্তমানে এটি জনসাধরনের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। একে ‘শালবন বিহার’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। খ্রিস্টীয় সাত শতকের মধ্যভাগ হতে আট শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেব বংশের শাসকগণ এই অঞ্চল শাসন করেছেন। দেব বংশের শাসনামলে চতুর্থ রাজা ভবদেব কর্তৃক এই ‘মহা বিহার’ নির্মিত হয়। আসলে এর নাম ছিলো ‘ভবদেব মহাবিহার’।

মধ্যভাগে মূল  মন্দির, মূল মন্দিরের চারপাশে ছোট ছোট ১২টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে বিশালাকার তোরণ এই বিহারের বিশেষ আকর্ষণ।  বিহারের চারদিকের দেয়াল ৫ মিটার পুরু। চুন ও সুরকিংর তৈরী দেয়ালগুলো এখনো রয়েছে।

কিভাবে যাবেনঃ-

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাস সার্ভিস তিশা, এশিয়া লাইন, রয়েল, প্রাইম, কর্ডোভা হয়ে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে কুমিল্লা শহরের দূরত্ব মাত্র ৯৬ কিলোমিটার। তবে নামতে হবে কুমিল্লা কোটবাড়ী গেট বা ময়নামতি ক্যান্টমেন্ট এর সামনে এখান থেকে ছোট গাড়িতে করে কোটবাড়ী বা শালবন বিহার।

আর যারা চট্টগ্রাম থেকে আসতে চান তারা কুমিল্লার বাসে আসলে প্রথমে কুমিল্লা শহরে বা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে থেকে সিএনজি, অটোরিকশা যোগে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন কুমিল্লা শালবন বিহারে।

আর যদি ঢাকার বাসে আসেন তাহলে কোটবাড়ী রোডের মাথা বা ক্যান্টনমেন্ট গেটে নামতে হবে।