গঙ্গাসাগর দিঘী| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1755

গঙ্গাসাগর দিঘী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় অবস্থিত।প্রায় পনেরশ বছর আগের ঘটনা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা বীর বিক্রম ঈশ্বরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর তৎকালীন সময়ে কর আদায় করতে আসতেন কুমিল্লায়। তখন এ অঞ্চলে পানীয় জলের সুব্যবস্থা ছিল না। এলাকার চারদিকের শুষ্ক পরিবেশ দেখে রাজা চিন্তিত হন। আশে পাশে কোন দীঘি নেই। তখন তিনি দীঘি খনন করার কথা ভাবলেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ, খনন করা হল বিশাল এই দীঘি। শুধু টলটলে পানির দীঘি নয়, এর উত্তরে রাজা বিশাল একটি ঘাটও তৈরী করে দিলেন।খাজনা আদায়ের কাজ করতে করতে রাজা ক্লান্ত হয়ে গেলে সে ঘাটে গিয়ে বিশ্রাম নিতেন। সামনের বিশাল জলরাশি আর চারপাশের খোলা প্রান্তরের হাওয়ায় রাজার মনকে শান্ত করে দিত। গঙ্গা দেবীর নামানূসারে দীঘির নাম দিলেন গঙ্গাসাগর।

আয়কর বা খাজনা আদায়ের ঘরকে তখন বলা হত তফসিল কাচারী। এখনও দীঘির উত্তরপারে তফসিল কাচারী রাজার কর আদায়ের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। দীঘির উত্তরপাড়ের লাগোয়ো অন্ধকার ঘরটির ভেতরের মেঝেতে এখনও কয়েকটি সিন্দুকের শেষাংশের ছাপ ষ্পষ্ট। তবে কালের পরিক্রমায় কাচারী ঘরে লেগেছে ধ্বংসের আচড়। দীঘির ঘাটের সিড়ি ভগ্নপ্রায়। গঙ্গাসাগর আর এই কাচারী আমাদের ইতিহাসেরই এক অংশ হয়ে গেছে আজ।

বাসাবোর পূর্ব প্রান্তে কদমতলীর সবুজবাগে অবস্থিত দীঘিটির দেখা মিলবে রাজারবাগ শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের সঙ্গে। মন্দিরের ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিশাল এই দীঘি। নানা ধরনের গাছগাছালিতে আকীর্ণ দীঘিটির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে আছে ছোট-বড় আরো অনেক মন্দির। দীঘিটি ক্রমেই হয়ে ওঠে তীর্থক্ষেত্র। পুণ্য লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মানুষ অষ্টমী স্নান, বারুণী স্নান উপলক্ষে এখানে এসে স্নানপর্ব শেষ করেন। তা ছাড়া প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এ দীঘিতে স্নান করে মনস্কামনা ব্যক্ত করেন। পরবর্তী সময়ে দীঘিটিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় বেশ কিছু মন্দির। এসব মন্দিরের মধ্যে আছে শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, শিবমন্দির, শীতলা মন্দির, বিশ্বকর্মা মন্দির, লোকনাথ মন্দির ইত্যাদি। দীঘির উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি শ্মশান ও শ্মশান কালীমন্দির। গঙ্গাসাগর দীঘির পরিমাপ প্রায় ৪.৫ একর। উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি এ দীঘির তিনটি ঘাট রয়েছে। দুটি পূর্ব দিকে, একটি উত্তর দিকে। এর সীমানাপ্রাচীর রয়েছে তিন দিকে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:-

ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে আসতে হবে রাজারবাগে। সেখান থেকে যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে গঙ্গাসাগর দীঘি/বরদেশ্বরী কালীমন্দির। মতিঝিল থেকে রিকশা ভাড়া নেবে ১০০ টাকা।