রাজা সীতারাম দুর্গ | ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1011

বাংলার পরদে পরদে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য লুকিয়ে রয়েছে। মোঘলদের বিরুদ্ধে রাজা সীতারামের বীরত্বের ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। রাজা সীতারাম ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের একজন আমলা। যিনি আমলা থেকে জমিদারি এবং পরে স্বীয় প্রতিভা বলে রাজা উপাধি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গটি আজও ইতহাসে সাক্ষ্যি হয়ে দাড়িয়ে আছে।

 

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, জমিদারি সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সীতারাম এ স্থানটিতে গড়ে তোলেন অসংখ্য দুর্ভেদ্য দুর্গ, কাঁচারি বাড়ি পরিখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ, পূজা-অর্চনার জন্য দেবালয় নির্মাণ, জনহিতার্থে খনন করেন বেশ কিছু বিশালাকার জলাশয়। মহম্মদপুরে রাজা সীতারাম রায় নির্মীত অসংখ্য নান্দনিক কারুকার্য খচিত স্থাপনা রয়েছে। এসব প্রত্নস্থান যা স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ী নামে পরিচিত। যা সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে পত্তন হওয়া উন্নত এক জনপদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও দেদীপ্যমান।

সীতারামের মহম্মদপুর দুর্গ বর্গাকারে নির্মিত। এই দুর্গের প্রত্যেক বাহু এক মাইলের চেয়েও বেশি দীর্ঘ। চার দিকে মাটির তৈরি উঁচু প্রাচীর। প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও গভীর পরিখা। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দুর্গের প্রধান প্রবেশপথ। পূর্ব ও দক্ষিণ কোণে পরিখা মজে গেলেও দক্ষিণ দিকের পরিখা আজো তার অতীত গৌরবের চিহ্ন বহন করছে। এটি খুবই প্রশস্ত ও এক মাইলের চেয়েও বেশি দীর্ঘ। এ পরিখা দেখতে প্রায় নদীর মতো। পশ্চিম দিকের পরিখাটিই বেশ বড়। সেটির চিহ্ন এখনো ঠিক আছে। রাজা সীতারাম কর্তৃক নির্মিত দোলমঞ্চটি এখনো স্মৃতি বহন করছে। বর্গাকারে নির্মিত নিচে প্রকান্ড বেদির ওপর ছিল দোলমঞ্চের অপেক্ষাকৃত ছোট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় বেদি। তৃতীয় বেদির ওপর ছিল দোলমঞ্চের চূড়া। মোগল ও হিন্দু স্থাপত্যের সমন্বয়ে স্থাপিত মঞ্চের চূড়াটি গম্বুজ আকারের হলেও চতুষ্কোণ ও দীর্ঘাকৃতির ছিল। এখানে হলি উৎসবের সময় রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপন করা হতো। গত কয়েক বছর হলো দোলমঞ্চটি সংস্কার করেছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। সংস্কারের মাধ্যমে এর আদিরূপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও এর গায়ে যেসব পোড়ামাটির ফলক ছিল সেগুলো এখন আর নেই।

‘বার ভুঁইয়া’র অন্যতম রাজা সীতারাম আজ নেই। নেই মন্ত্রী সেনাপতি, রক্ষি, সেপাই, লোক-লস্কর, পাইক- পেয়াদা; কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে ভগ্নাবশেষ অবস্থায় এক ঠায় দাঁড়িয়ে আছে রাজপ্রাসাদ, বিলাসগৃহ, কোষাগার, মালখানা তোষাখানা, নহবতখানা, গোলাঘর, কারাগার, দশভূজার মন্দির, লক্ষ্যী নারায়ণ মন্দির, জোড়া বাংলো কৃষ্ণ মন্দির, শিবমন্দির, সেনাপতি সমাধি, সিংহদ্বার, পঞ্চবটিতলা, কাচারিবাড়ি, দোলমঞ্চ, রামসাগর, সুখসাগর, পদ্মপুকুর, ধানপুকুর, ল²ী নারায়ণ পুকুর প্রভৃতি।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি মাগুরা জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।