বাংলাদেশ অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। এই দেশে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা দর্শনীয় স্থান রয়েছে তেমনি মানুষের তৈরি কিছু স্থাপনা রয়েছে যা ঐতিহ্যগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন গির্জা তেমনি একটি স্থাপনা যা কিনা এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম গির্জা। গির্জাটির আসল নাম ইপিফানি গির্জা হলেও স্থানীয় ভাবে অক্সফোর্ড মিশন নামেই পরিচিত।
চিত্তাকর্ষণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বরিশালের শতবর্ষী অক্সফোর্ড মিশনের লাল গির্জা। কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ি থেকে একটু এগুলেই নগরীর জীবনানন্দ দাশ সড়কে অবস্থিত পামগাছ ঘেরা এ গির্জার সীমানা শুরু। লাল ইট দিয়ে নির্মিত বলে চার্চটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত। এটির বয়স ১১৪ বছর। ১৯০৩ সালে চার্চের প্রথম ধাপের কাজ শেষে হয়। পরে সে বছরই ২৬ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয় এই এপিফানী গির্জা, এটি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন চার্চ নামেও বহুল পরিচিত। সিস্টার এডিথের স্কেচ ও ডিজাইন অনুসারে ফাদার স্ট্রং এ গির্জার নকশা চূড়ান্ত করেন, প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফ্রেডেরিক ডগলাস। নির্মাণের ১১৪ বছর পরেও আজও এর সৌন্দর্যের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।পুরো ভারতবর্ষে প্রোটেস্ট্যান্টদের গির্জার মধ্যে এটিই নাকি সেরা। অ্যাংলিক্যান মিশনারিজের এটি সেরা স্থাপনা।জানাযায়, ১৮৮৯ সালে ইংল্যান্ডের আর্চবিশপের নির্দেশে অ্যাংলিক্যান মিশনারিজের একটি গ্রুপ আসে ভারতবর্ষে। তাদের মিশন শুরু হয় ভারতের মাদ্রাজ থেকে। এর পরই তাদের একটি গ্রুপ আসে বাংলাদেশে। তাঁরা বরিশাল শহর ও আগৈলঝাড়ায় জোবার পাড়ে দুটি জায়গা বেছে নেন।বরিশাল শহরের এই স্থানে প্রায় ২৩ একর জমি ঘিরে তারা শুরু করেন মিশনের কার্যক্রম। ১৯০৩ সালে গির্জা ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯০৭ সালে শেষ হয়।
সারিসারি পামগাছের মাঝে অবস্থিত প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সুরম্য লাল এই স্থাপনাটি দেখে দূর থেকেই মুগ্ধ হতে হয়। গ্রীক ঢং এ তৈরী এ চার্চটির প্রথম ধাপের নির্মাণ কাজ ১৯০৩ সালে শেষ হওয়ার পর এটি উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯০৭ সালে এর ২য় ধাপের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। চার্চটি ৩৫ একর জমির উপরঅবস্থিত। প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকেলই মন কেড়ে নেয় এর শান্ত, স্নিগ্ধ, মনোরম পরিবেশ। বিস্তৃত ঘাসের কার্পেটের মধ্যে আভিজাত্য আর শান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চার্চটি। এর সুবিশাল প্রার্থনা কক্ষ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে তৎকালীন সময়ের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। সুদৃশ্য মার্বেল টাইলস খচিত মেঝে, কাঠের কারুকার্য খচিত ছাদ আমাদের অনায়াসেই নিয়ে যায় ১০০ বছর পিছনের সময়ে।
বাড়ির পাশের এমন প্রাঙ্গণে অন্যদের মতো রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের স্মৃতিও আছে বহু। চার্চের ব্যবস্থাপক বেনডিক্ট বিমল ব্যাপারি বলেন, গির্জা ছাড়াও ছোট-বড় তেরটি পুকুর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবাসিক ছাত্র হোস্টেল, ফাদার ও সিস্টারদের আবাসন, পাঠাগার ও হাসপাতাল আছে এ চার্চ প্রাঙ্গণে। তবে ধর্মীয় পরিবেশের পবিত্রতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজস্ব সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া সাধারণদের জন্য চার্চের সীমানার ভেতর প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ।
কিভাবে যাবেনঃ
বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রের কাছাকাছি বগুড়া রোডে বরিশাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল থেকে পশ্চিম দিকে সামান্য সামনে চার্চটির অবস্থান। শহরের যে কোন জায়গা থেকে অটো/রিক্সা/মাহেন্দ্র যোগে যাওয়া যাবে। আগে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকলেও বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে এখানে প্রবেশের ব্যাপারে কিছু বিধি নিষেধ আছে। তাই বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়। তবে বাইরে থেকে চার্চটি দেখেও মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত।ip