ঢাকার নিমতলীতে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ ভবনের পেছনে একটি প্রাচীন স্থাপনা দেউড়ি লক্ষ্য করা যায়। তা-ই নিমতলী ফটক বা গেট (Nimtali Gate) হিসেবে পরিচিত। এককালে এখানে একটি প্রাসাদও ছিলো। তাই এটাকে নিমতলী কুঠিও (Nimtali Kuthi) বলা হতো। পরবর্তীতে প্রাসাদটি ভেঙে ফেলা বা বিলুপ্ত হলেও ফটকটি রয়ে গেছে। ১৭৬৬ সালে লে. সুইনটন তড়িঘড়ি করে এই ফটক ও প্রাসাদ নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। ঢাকা বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক আহমদ হাসান দানি’র মতে ব্রিটিশ আমলে সর্বপ্রথম নিমতলী ফটকে সমান্তরাল ছাদ ব্যবহার করা হয়।
নগরের উত্তর দিকে আধুনিক নিমতলী মহল্লা ও হাইকোর্ট ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে নিমতলি প্রাসাদ অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং বেশ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ইমারতের সমবায়ে গঠিত ছিল। এর অবস্থান ছিল তৎকালীন শহর এলাকার ঠিক প্রান্তে, যার অধিকাংশ বনভূমিবেষ্টিত ছিল। এ কাঠামোগুলির কোনো সঠিক অথবা বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা সম্ভব নয়। কারণ এর অবস্থানের কোনো সমকালীন আখ্যান অথবা নকশা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। বর্তমানে বিদ্যমান একমাত্র গেট নিমতলী দেউড়ি বিচার করে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এটি মুগলদের সচরাচর প্রাসাদের নকশা অনুসরণ করেই নির্মিত হয়েছিল, যেখানে অনেকগুলি গেট, অভ্যন্তরীণ অঙ্গন, নিভৃত বাসস্থান, প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান, পুকুর অথবা পানির চৌবাচ্চা, সৈন্যদের ব্যারাক ও কর্মচারীদের আবাস, বাগান ও এ ধরনের অন্যান্য অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর দিক থেকে শুরু হওয়া একটি সরু খাল, যেটি পূর্বদিকে অবস্থিত কমলাপুর নদী থেকে পানি পেত, প্রাসাদটিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করত। নওয়াবী দিঘি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও শহীদুল্লাহ হলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত) নামে অভিহিত একটি বৃহৎ পুকুর এবং বর্তমান এশিয়াটিক সোসাইটি কমপ্লেক্সের দক্ষিণে অবস্থিত এক গম্বুজবিশিষ্ট নওয়াবী মসজিদটি এখনও বিদ্যমান।
যতদিন পর্যন্ত প্রাসাদটি নায়েব-নাজিমের বাসভবন ছিল, ততদিন এটি ঢাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নৃত্য, চিত্রাঙ্কন এবং চারু ও কারুকলার অন্যান্য বিষয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে ঢাকায় মুগল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করেছে এ প্রাসাদ। এখানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো এমন একটি আনন্দময় অনুষ্ঠান ছিল ঈদ শোভাযাত্রা যা ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে বের করা হতো। এটি নিমতলী দেউড়ি থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে আবার এখানে এসে শেষ হতো।
ঢাকার নায়েব নাজিম জেসারত বা জসরত খান ঢাকার বড় কাটরায় অবস্থান করেন এবং তার বাসভবন হিসেবে নিমতলীতে একটি প্রাসাদ নির্মিত হলে তিনি বড় কাটরা ছেড়ে নিজ বাসভবনে উঠলেন। সেই থেকে ঢাকার নায়েব নাজিমদের বাসভবন হিসেবে নিমতলী প্রাসাদ ‘নিমতলী কুঠি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। নিমতলী নামের উৎপত্তি জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, এক সময় হয়তো এ এলাকায় নিমগাছের আধিক্য ছিলো। সে কারণেই এ নামকরণ। আর নায়েব নাজিমদের বাসস্থান হিসেবে এলাকাটি বিখ্যাত হয়ে যায় নিমতলী প্রাসাদ বা কুঠির জন্য। যেহেতু নায়েব নাজিমরাই হলেন ঢাকার আদি নবাব, তাই উনিশ শতকে পুরো এলাকাটি পরিচিত হয় নওয়াবী দালান নামে।
কীভাবে যাবেন:
নিমতলি প্রাসাদ পুরাতন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তরতীরে অবস্থিত। আপনি যেকোনো লোকাল অথবা কাউন্টার সার্ভিস বাসে করে পৌছে যেতে পারেন।