নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। নীলফামারী একটি প্রাচীন জনপদ। ১৮৭৫ সালে মহকুমা ও তা ১৯৮৪ সালে পরবর্তীতে নীলফামারী জেলায় উন্নীত হয়। ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন ও প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকে এই অঞ্চলে আদিম জনবসতির অস্তিত্তের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে খননকৃত বিরাট রাজার দীঘি অপভ্রংশে বিন্নাদীঘি নীলফামারীর প্রাচীন ইতিহাসের স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় ধর্মপালের গড়, হরিশ্চন্দের পাঠ, ভীমের মায়ের চুলা, ময়নামতির দুর্গ এ জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন।
কৃষি নির্ভর এই জেলায় ৯০% মানুষ কোন না কোন ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। নীলফামারীর দিগন্ত বিস্তৃত সমতল ভুমিতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে ধান, গম, আলু, তামাক এবং বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপন্ন হয়। এই জেলায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা সেচ প্রকল্প সেচ ও সম্পুরক সেচ সুবিধা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
নামকরনের ইতিহাসঃ-
প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত মাটির ঊর্বরতার কারণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদ অঞ্চলে।গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেলস্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীলখামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।
ভৌগোলিক অবস্থান:-
রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ দুরে ১৬৪৩.৪০-বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ জেলার অবস্থান,যা কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে অবস্থিত। এ জেলার পূর্বে রংপুর জেলা ও লালমনিরহাট জেলা, দক্ষিণে রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলা,পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলা এবং উত্তরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা।
৬ টি উপজেলা
নীলফামারী সদর উপজেলা
ডোমার উপজেলা
ডিমলা উপজেলা
জলঢাকা উপজেলা
কিশোরগঞ্জ উপজেলা ও
সৈয়দপুর উপজেলা
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:-
শাহ কলন্দর ইসলামী ব্যক্তিত্ব,
কাজী কাদের, সাবেক মন্ত্রী (পাকিস্তান আমল);
মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) (জিয়াউর রহমান সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন);
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম;
খয়রাত হোসেন, সাবেক মন্ত্রী;
বিচারপতি মোস্তফা কামাল, সাবেক প্রধান বিচারপতি;
শফিকুল গনি স্বপন, সাবেক মন্ত্রী;
মহেশ চন্দ্র রায়, উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী।
হরলাল রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
রথীন্দ্রনাথ রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
আসাদুজ্জামান নূর, নাট্য ব্যক্তিত্ব; বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ; নীলফামারী-২
আনিসুল হক, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক;
বেবি নাজনিন, কন্ঠশিল্পী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নীলফামারী
বিখ্যাত স্থান:-
ধর্মপালের রাজবাড়ি
ময়নামতি দুর্গ
ভীমের মায়ের চুলা
হরিশচন্দ্রের পাঠ
সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ
তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প
নীলফামারী জাদুঘর
কুন্দুপুকুর মাজার
দুন্দিবাড়ী স্লুইসগেট
বাসার গেট
স্মৃতি অম্লান
নীলসাগর
কিভাবে যাবেন:-
ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে নীলফামারী জেলা যাওয়ার জন্য এসি ননএসি বাস পাওয়া যায়। বাস সার্ভিসগুলোর মটর যান ও সেবার মান অনুযায়ী ভাড়া বিভিন্ন রকম: নরমাল হলে ৩০০-৪৫০ টাকা, চেয়ার কোচ হলে ৪৫০-৫৫০ টাকা, এবং এসি কোচ হলে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বিআরটিসি বাসে করে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া বা রংপুর হতে আসা যায়।
নীলফামারী জেলার অন্তর্গত সৈয়দপুর পৌরসভায় সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত এই বিমানবন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের দৈনিক একাধিক সরাসরি ফ্লাইট বিদ্যমান।