যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে মানুষ নির্মাণ করে স্মৃতিস্তম্ভ। এর মাধ্যমে ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হয়, সরল হয়ে যায় অমর ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর কঠিন কাজটাও। সেজন্যই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন যারা, তাদের স্মরণে নির্মিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বর্হিপ্রাঙ্গনে অবস্থিত। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।
এই শহীদ মিনারকে ঘিরে ভাষা আন্দলনের ইতিহাস জড়িত। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার দাবিতে ঐদিন সাধারন ছাত্ররা রাস্তায় নামা আসে।তারা রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন করার প্রস্তুতি গ্রহন করে। তখন ঢাকাতে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। ২১ ফেবরুয়ারী সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক,জব্বার,শফিউল,সালাম,বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে
৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকবাহিনী মিনারটি আবার ভেঙ্গে দেয় এবং সেখানে ‘মসজিদ’ কথাটি লিখে রাখে। কিন্তু এদেশের মানুষ তা গ্রহণ করেনি। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ মিনার নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে শহীদ মিনার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতীকস্বরূপ হয়ে ওঠে। বহির্বিশ্বে ১৯৯৭ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গের ওল্ডহ্যামে এবং ১৯৯৯ সালে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে শহীদ মিনার নির্মিত হয়।
যেভাবে যাবেনঃ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ঢাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাসে অবস্থিত। ঢাকা শহরের যেকক স্থান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আসতে হবে। সেখান থেকে রিকশাও দিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত যাওয়া যায়।