বাঙালি জাতির এক গৌরবময় ইতিহাস হলও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ। নয় মাস ব্যাপী সংঘটিত হওয়া এই যুদ্ধে ত্রিশ লিক্ষ্য মানুষ শহীদ হয়েছিলো। তাদের এই আত্ব ত্যাগের জন্য অর্জিত হয় আজকের এই স্বাধীনতা। ১৯৭১ এর এই মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক এসেছিলো মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই মুজিবনগরে তৈরি করে হয় স্মৃতিসৌধ যা বাংলার ত্রিশ লক্ষ্য শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন এই স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি দেখতে।
মুজিবনগর আম্রকাননের যে স্থানটিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা ও শপথ গ্রহণ হয়, সেই স্থানে ১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ। যা বর্তমানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নামে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিশেষভাবে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে সারা বছর মুজিবনগরে লোক সমাগম হয়। অনেকে দেখতে আসেন; অনেকে জানতে আসেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে স্বগর্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর স্মৃতি মিউজিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। একই দিনে বঙ্গবন্ধু তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনছুর আলী। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে সেখানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ এবং রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেন।
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটিতে স্বাধীনতার রক্তাক্ত সূর্য হতে বিচ্ছুরিত ২৩ রশ্মির শেষাংশ দ্বারা ২৩ স্তম্ভ বোঝানো হয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্থানী শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিক। দেওয়ালগুলোর প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটির দেওয়াল ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ এক ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বেড়ে গেছে। যার অর্থ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেওয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেওয়ালে ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে। যেগুলো পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠির অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে। স্মৃতিসৌধের ভূতল থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত দ্বারা এক লক্ষ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে। তি সৌধের ভূতল থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর দ্বারা ৩০ লাখ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণ প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলোর মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন (পূর্ব বাংলার যা পূর্ব পাকিস্থান নামে পরিচিত ছিল) ১৯ টি জেলা বোঝানো হয়েছে।
স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আমবাগান ঘেষা যে স্থানটি মোজাইক করা রয়েছে, তা দিয়ে বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। যদিও বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের দক্ষিণে তবুও শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সঙ্গে সামাঞ্জস্য রক্ষার জন্য এটিকে উত্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে যাবেনঃ-
মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে আম্রকাননের দূরত্ব ১৮ কি: মি:। বাস, স্থানীয় যান টেম্পু/লছিমন/করিমন এর সাহায্যে ৩০ মি: সময়ে ঐতিহাসিক আম্রকাননে পৌছানো যায়। মেহেরপুর সদর হতে বাস ভাড়া ২৫-৩০ টাকা ।