ব্রহ্মপুত্র নদ ছোঁয়া ময়মনসিংহ শহরের সোনালী ব্যাংক জোনাল অফিসের পাশেই গৌরীপুর লজ। গৌরীপুরের রামগোপালপুরের রাজা যোগেন্দ্র কিশোর রায়ের নির্মিত বিদ্যাপীঠ, রঙিন কাঁচের কারুকার্যের প্রাসাদ, কৃষ্ণ মন্দির ও প্রাসাদের প্রধান সুরঙ্গ পথ যে কাউকে মুগ্ধ করে।
প্রাসাদের প্রধান সুরঙ্গ থেকে একটু এগিয়ে গেলে দু’টি সিংহের মুখোমুখি অবস্থানে সিমেন্ট, চুন আর কাঁচ দিয়ে নির্মিত ঐতিহাসিক গৌরীপুর লজের সিংহ দরজা চোখে পড়ে। তখন ডানে-বামে পেছনে রাজপরিবার, অতিথি আর কর্মচারীদের জন্য তৈরি পৃথক পৃথক শান-বাঁধানো পুকুরঘাট ভ্রমণ পিয়াসীদের মনে জাগায় অদম্য কৌতূহল। কল্পনায় ভাসে তাদের আভিজাত্যের কথা। ময়মনসিংহের গৌরীপুর লজের এ চিত্র নান্দনিক। শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে রাজা-জমিদারদের তীর্থ স্থান গৌরীপুর উপজেলাতেও রয়েছে এমন আরো চোখ জুড়ানো নানা স্থাপত্যশৈলী।
সময়ের স্রোতধারায় এসব জীর্ণ স্থাপত্যকীর্তি এখনো কিংবদন্তি। আছে কালের সাক্ষী হয়ে। টিন, কাঠ ও লোহা দিয়ে সম্পূর্ণ এ দেশীয় পদ্ধতিতে রাজবাড়ীর আদলে তৈরি সুরম্য অট্টালিকা হলো গৌরীপুর লজ। ব্যালকনি, ড্রইং, ডাইনিংসহ ছোট-বড় প্রায় ২০টি কক্ষ আছে এ লজে। এ অট্টালিকার সামনে আছে মনোরম ফুলের বাগান। এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী কী কারণে এ লজ নির্মাণ করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায় না। তবে সঙ্গীতের সুমধুর রহস্য অনুসন্ধানে সচেষ্ট এ ব্যক্তির সঙ্গীত-পিপাসা নিবারণের জন্য আলাউদ্দিন আলী খাঁ, মুহম্মদ আলী খাঁ, হাফেজ আলী খাঁ, মুস্তফা খাঁ প্রমুখ সঙ্গীত বিশারদরা এসেছিলেন গৌরীপুর লজে। প্রায় ১ দশমিক ৩৬ একর জমির ওপর সবুজের সমারোহে, কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গৌরীপুর লজ। বর্তমানে এ প্রাচীন অট্টালিকা সোনালী ব্যাংকের ময়মনসিংহ অঞ্চলের করপোরেট অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
কিভাবে যাবেনঃ-
সড়ক পথে ঢাকা হতে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে ময়মনসিংহ রেল স্টেশনের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার। ঢাকার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে ময়মনসিংহে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ২.৩০ হতে ৪.০০ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহে আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন ময়মনসিংহের পথে যাতায়ত করে।