দিল্লীর আখড়া, নাম শুনেই মনে হতে পারে এটা বুঝি ভারতের কোন স্থান কিংবা স্থাপনা। আসলে এটি কিশোরগজ্ঞ জেলার মিঠামইন উপজেলার কাটখালা ইউনিয়নের অন্তরভুক্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনালয়। এটি মোঘল স্থাপনার এক অনন্য নিদর্শন। দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতিবিজড়িত এই দিল্লির আখড়াকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিশাল খোলা জায়গা। আখড়ার চারদিকে এই বিশাল জায়গায় রয়েছে প্রায় তিন হাজার হিজল গাছ। প্রাচীন এই আখড়া আর হিজল গাছগুলো হাওরের এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি- যা সকলকেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। আখড়াটি ৩৭২ একর জমি নিয়ে গঠিত।
প্রায় ৪০০ বছর আগে এই জায়গাটির পাশ দিয়ে দিল্লীর সম্রাট প্রেরিত একটা কোষা নৌকা মালামাল সহ ডুবে যায়। এবং এক জন সাপের কামড়ে মারা যায়। এ কথা শুনে পার্শ্ববর্তী বিথঙ্গল আখড়ার গুরু রামকৃষ্ণ গোস্বামী তার শিষ্য নারায়ণ গোস্বামীকে এখানে পাঠান। টানা সাত দিন তিনি এখানে রহস্যজনক নানা শক্তির সম্মুখীন হন এবং পরবর্তীতে এখানে বসবাস করা অসংখ্য দানব মূর্তিকে আধ্যাত্মিক শক্তিবলে হিজল গাছে রূপান্তর করেন। আর সম্রাটের ডুবে যাওয়া নৌকাটিও উদ্ধার করে দেন। খুশি হয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে আখড়ার নামে একটি তামার পাত্রে এই জায়গাটি লিখে দেন। ১৩৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তামার পাত্রটি ডাকাতরা চুরি করে নিয়ে যায়। চারদিকে হাওড় বেষ্টিত এই স্থানটি অত্যন্ত প্রাচীন। প্রায় ৪০০ বছর আগের এক মিথ নিয়ে স্থানটি আজো দীপ্তিমান। এখানে আখড়ার চারপাশে আছে হাজার তিনেক হিজল গাছ। এই গাছগুলোও এখানকার প্রচলিত মিথের অংশ। আখড়া, হিজল গাছ, হাওরের সৌন্দর্যে চমৎকার একটি স্থান এই দিল্লীর আখড়া।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলায় সাধারণত সড়ক পথেই যাতায়াত করা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব রুটে যে কয়েকটি পরিবহন চলাচল করে তার মধ্যে ঈসাখাঁ এক্সক্লুসিভ, অনন্যা সুপার, যাতায়াত, এবং গাজীপুর রুটে অনন্যা পরিবহন, হাওড় বিলাস, জলসিঁড়ি অন্যতম। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস রেলগাড়ি ছেড়ে যায়। শহরে নেমে রিকশায় করে একরাম পুর, সেখান থেকে অটো রিকশায় মরিচখালি বাজার। এখন থেকে নৌকায় চড়ে দিল্লীর আখড়া। এছাড়া শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে আখড়ায় আসতে হয়।