ঐতিহ্যবাহী জেলা কুমিল্লা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও স্থাপত্যের জন্য বেশ সুপরিচিত। প্রাচীন এই জেলাটিতে রয়েছে দর্শনীয় অনেক জায়গা। এসব জায়গার অধিকাংশই অতীত ইতিহাসকে বুকে নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এসকল অতীত নিদর্শনের মধ্যে ধর্মসাগর দিঘি অন্যতম। ঐতিহাসিক এই দিঘিটি শুধু কুমিল্লা নয় বাংলাদেশের প্রাচীন কয়েকটি দীঘির মধ্যে অন্যতম বড় একটি দিঘি। তাই আপনার কুমিল্লা ভ্রমণ তালিকায় এই ধর্মসাগর দিঘিটি রাখতে ভুলবেন না।
কুমিল্লা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র বাদুরতলা এলাকায় অবস্থিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক ‘ধর্মসাগর’। এ সাগরের আয়তন ২৩ দশমিক ১৮ একর। এটি চারদিকে বৃক্ষশোভিত একটি মনোরম স্থান। ধর্মীয় উত্সব-বর্ষবরণ ছাড়াও বছরের প্রায় সবসময় এখানে দেখা যায় প্রকৃতি ও বিনোদনপ্রেমীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীর ঢল। তবে ইতিহাসগত কারণে এর নামকরণ ‘সাগর’ হলেও এটি সাগর নয় ‘দীঘি’। এদিকে ধর্মসাগর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে প্রাচীনতম অনেক দীঘি।
ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য।রাজমালা গ্রন্থ আনুসারে মহারাজা সুদীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রি:)। মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। ধর্মসাগর নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।
দিঘিটির আয়তন প্রায় ৯.৩৮১ হেক্টর। শুরুতে দিঘির মাঝামাঝি স্থানে একটি মাটির ঢিবি ছিল। দিঘিটির পূর্ব পারে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল অবস্থিত। এর উত্তরে রয়েছে কুমিল্লা পৌর পার্ক, রানির কুটির এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে নির্মিত একটি দ্বিতল বাড়ি। দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে রাজদেবী মাতৃসদন ও শিশুকল্যাণ প্রতিষ্ঠান। এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন ধর্মসাগরকে একটি মনোমুঙ্কর দর্শনীয় স্থানে পরিণত করেছে। শীতকালে এখানে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ১৯৬৪ সালে দিঘিটির পশ্চিম ও উত্তর পাড়টি তদানীন্তন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ হাসান আহমদের উদ্যোগে পাকা করা হয়। দিঘিটি বর্তমানে মৎস্য বিভাগের অধীন। তবে দিঘির পশ্চিম পারসংলগ্ন পাঁচ একরের উদ্যানটি কুমিল্লা পৌরসভার। অদ্ভুত সুন্দর এক আবেশ ছড়িয়ে আছে ধর্মসাগরের জল আর পারজুড়ে। দক্ষিণ পারে গড়ে উঠেছে কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়। বেশ পুরনো একটি দালানে চলে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। সামনে সবুজ ঘাসের মাঠটি দেখে অনায়াসে গা এলিয়ে দিতে মন চাইবে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কুমিল্লা যাওয়া যায়। ঢাকার সায়দাবাদ ও কমলাপুর বি আর টি সি বাস কাউন্টার থেকে কুমিল্লার বাস ছাড়ে। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় পৌঁছাতে আড়াই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কুমিল্লা শহরে নেমে যে কোন রিক্সা বা অটোরিক্সা নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ধর্মসাগর দিঘি।