ঢাকায় মোগল বাদশাহী আমলে নির্মিত স্থাপত্য কীর্তির মধ্যে ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । মুসলমানদের দুটো প্রধান ধর্মীয় উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুর আজহার সময় ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহের প্রয়োজন হয় । আজ থেকে ৩/৪ শ বছর আগে ধানমন্ডির এই শাহী ঈদগাহ ছিল এতদঞ্চলের প্রধান ঈদগাহ । এটি নির্মাণ করেন মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে। (১০৫০ হিজরি)। ওই সময় বাংলার সুবাদার ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা। এই আবুল কাসেমই ছিলেন তার দেওয়ান। ঢাকায় মোগল আমলের যে স্থাপত্য নিদর্শনগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে কোনোরকমে টিকে আছে তারই অন্যতম হলো এই শাহী ঈদগাহ মাঠ।
বর্তমান জিকাতলা থেকে মোহাম্মদপুর গামী সাত মসজিদ রোডের মাঝামাঝি স্থানে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে একটি উচ্চ ভূমির উপর এই প্রাচীন ঈদগাহটি অবস্থিত । সেখানে পাণ্ডু নদীর একটি শাখা এই ঈদগাহের দক্ষিণ পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জাফরাবাদ এলাকায় গিয়ে বড়িগঙ্গায় পড়তো । ঈদগাহের সামনে উক্ত নদীতে একটি সুন্দর ব্রীজ ছিল যা এখন নেই । পার্শ্ববর্তী ভূমি থেকে প্রায় ৪/৫ ফুট উচ্চ ভূমির উপর স্থাপিত ঈদগাহটির মূল আয়তন ছিল ২৪৫ ফুট এবং প্রস্থ ১৪৭ ফুট । উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে ৬ ফুট করে উচ্চ প্রাচীর দ্বারা ঈদগাহের স্থানটি ঘেরা ছিল । দেয়ালগুলো কালক্রমে জীর্ণ ও ধ্বংস হয়ে যায় । ঈদগাহের পশ্চিম দিকে জুড়ে রয়েছে ১৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বৃহদাকার দেয়াল । এই পশ্চিম দেয়ালের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে খিলানের সাহায্যে নির্মিত সুদৃশ্য মেহরাব । এই মেহরাবের উভয় পার্শ্বে আছে খাঁজকাটাও ধনুকাকৃতির প্যানেল নকশা । এগুলোর পরে উভয় দিকে রয়েছে তিনটি করে ছোট ও অগভীর মেহরাব । কেন্দ্রীয় মেহরাবের সামনে দাড়িয়ে ইমাম সাহেব ঈদের নামাজে খোতবা দেন এবং নামাজের নেতৃত্ব দেন । কেন্দ্রীয় মেহরাবের উপর যে শিলালিপি রয়েছে তা থেকে জানা যায়, দিল্লীর সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ্ সুজা যখন বাংলার সুবাদার ছিলেন তখন তাঁর দেওয়ান মীর আবুল কাশেম ১০৫০ হিজরী মোতাবেক ১৬৪০ খ্রী: এই ঈদগাহ নির্মাণ করেন । উল্লেখ্য একই ব্যক্তি ঢাকার তৎকালীন বিখ্যাত স্থাপত্য কীর্তি বড়কাটরাও নির্মাণ করেছিলেন । মোগল আমলে ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহে ঢাকার প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো । ঈদের দিনে ঈদগাহ এলাকায় একটি ঈদের মেলা বসত বলে জানা যায় । ব্রিটিশ আমলে লোক সংখ্যা কমে যাওয়া, ঢাকা শহর সংকুচিত হওয়া এবং পাণ্ডু নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহর গুরুত্ব কমে যায় । অযত্নে সেটা জরা-জীর্ণ হয়ে পড়ে । সম্প্রতি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রচেষ্ঠায় সেটার সংস্কার করা হয়েছে ।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে ধানমন্ডিলেক আসা যায়। বাসে আসলে নামতে হবে ঝিগাতলা। সেখান থেকে রিক্সা করে ধানমন্ডিলেক যাওয়া যায়।