মোগল আমলে ঢাকার রাজধানী হলে যে স্থাপনাটি সবার দৃষ্টি কাড়ে, তার অন্যতম বুড়িগঙ্গার তীরের বড় কাটরা। মধ্য এশিয়ার ক্যারাভান সরাই-এর ঐতিহ্য অনুসরণে নির্মিত হয়েছিল বড় কাটরা। মোগল রাজকীয় স্থাপত্য-রীতির সব বৈশিষ্ট্য এতে ছিল। বড় কাটরায় ফারসি ছন্দোবদ্ধ পঙ্ক্তিযুক্ত দুটি শিলালিপি আছে। সে অনুযায়ী ১৬৪৩-৪৪ সালে এটি নির্মিত। বড় কাটরা নির্মাণ করেছিলেন সুবাদার সুলতান মুহম্মদ সুজার প্রধান স্থপতি আবুল কাশিম। মূলত এটি নদী তীরবর্তী একটি দূর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর পূর্বে বড় কাটরা ভবনে হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার চকবাজার থানা থেকে দক্ষিণ দিকে ১৬, বড় কাটারায় এটি অবস্থিত।
বড় কাটরার চারটি প্রবেশ পথের পরেই ছিল অষ্টকোণাকৃতির একটি হল কামরা এবং এর উপরের ছাদ ছিল গম্বুজাকৃতির এবং তাতে পলেস্তরার উপর নানা রকম লতাপাতা ইত্যাদির সুন্দর অলঙ্করণ ছিল। এ হল কামরার মাঝামাঝি অংশের সোজা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ছিল পর পর দুটি করে কামরা। কাটরার ভেতর দিকে দোতলা ও তিনতলায় ওঠার সিঁড়ি আছে। দক্ষিণ দিকের প্রসারিত অংশ ছাড়া কাটরার এ অংশের আয়তন প্রায় ১৮.২৮ × ১৩.৪১ মিটার। উপরে দোতলায় এবং তিনতলায় নির্মিত ছিল বসবাসের কক্ষ। শুধু প্রবেশপথের উপরের অংশই ছিল তিনতলা বিশিষ্ট। তিনতলার কক্ষসমূহ চতুষ্কোণাকার এবং অশ্বক্ষুরাকৃতি ফ্লা্যট আর্চ সম্বলিত ছিল। কাটরার বাকি অংশ ছিল দ্বিতল।
প্রবেশপথ এলাকায় দুপাশে নিচতলায় প্রত্যেক ভাগে ৫টি করে ভল্টেড কক্ষ রয়েছে যেগুলিতে বর্তমানে সাদা পলেস্তরা করা হয়েছে। প্রত্যেক দিকের শেষ দুটি কক্ষ থেকে উত্তরভাগে কিছু অংশ কেটে নিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ১টি করে আলাদা কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। এ কক্ষসমূহ ভল্টযুক্ত নয় এবং এগুলির সামনে আছে টানা বারান্দা।
দক্ষিণ ব্লকের দুকোণে দুটি বিরাট টাওয়ার রয়েছে। অষ্টকোণাকৃতির টাওয়ারসমূহ ফাঁকা প্যানেল অলংকরণ সম্বলিত এবং ব্যাস ৩.০৪ বর্গ মিটার। কোণার কক্ষসমূহ থেকে এ টাওয়ার দুটিতে যাওয়া যায়।এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারনে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল। যেখানে এই মুসাফির খানার নির্মাতা ও এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়।
অতীতের অবকাঠামোর সাথে সংযুক্ত করে বর্তমানে আরও নতুন ভবন সংযোজন করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করছে। মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে শুধুমাত্র বড় কাটারার মূল গেইটসহ কিছু ভবন রয়েছে। অন্যগুলো বেদখল হয়ে গেছে। স্থাপনা ভবনটি সময়ের পরিবর্তনে সংস্কারের অভাবে অতীত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। স্থাপনা প্রাঙ্গনে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লাইব্রেরী রয়ছে। এখানে কোন জাদুঘর নেই।
কীভাবে যাবেন:
বড় কাটরা চক বাজারের দক্ষিণে বাবু বাজার এলাকায় অবস্থিত। এখানে যেতে হলে আপনাকে বাসে বা সিএনজি নিয়ে পুরান ঢাকায় আসতে হবে। আপনি চক বাজার থেকে রিক্সা নিয়ে বাবু বাজার এসে এই ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে যেতে পারেন।