বঙ্গবন্ধুর চর| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

892

কর্মব্যস্ত এই জীবনে বিনোদনের এক অন্যতম মাধ্যম হলও দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। মানুষ দূরবর্তী স্থানে বেড়াতে যাওয়ার সময় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা স্থানকেই বেছে নেয়। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারে সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমদের এই দেশে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উথা অনেক স্থান রয়েছে। তাছাড়া সমুদ্রের বুকে নতুন নতুন চর জেগে এই স্থান গুলোর সংখ্যা দিন দিন আরও নতুন নতুন স্থান তৈরি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর চর তেমনি একটি নতুন সম্ভাবনা ময় জায়গা। সমুদ্রবন্দর মোংলা থেকে প্রায় ১৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রের বুকে জেগে উঠছে বিশাল এই বালুচর। গত কিছু দিন ধরে অনেক দর্শনার্থীর আনাগোনা শুরু হয়েছে এই বালুচরে।

৮ থেকে ২০ বছর আগে আলাদা ভূখ- বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরটিকে কয়েকজন জেলে ‘বঙ্গবন্ধুর চর’ নামকরণ করে। সেই থেকেই নতুন এই চরটি ‘বঙ্গবন্ধুর চর’ নামে সবার কাছে পরিচিত পেয়েছে। এই বঙ্গবন্ধুর চরে এখন ইকো-ট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) পদচারণা বেড়েই চলেছে। তবে আপাতত সেখানে কোনো পর্যটন স্পট করার পরিকল্পনা নেই বন বিভাগের। বঙ্গবন্ধু চরের পাশে বন বিভাগের নীলকমল অভয়ারণ্য রয়েছে। ওই চরটাও অভয়ারণ্যের অংশ এবং এটা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বীপটির চারপাশে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল, নানা প্রজাতির পাখি, সবুজ-শ্যামল বনাঞ্চল, সাঁতারের উপযোগী স্থান, সী বিচ ও জীববৈচিত্র্য রয়েছে, যা প্রর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘ এ সৈকতজুড়ে কচ্ছপ, চার প্রজাতির কাঁকড়া, ষোলো প্রজাতির মোলাঙ্কা (শামুক-ঝিনুক), আট প্রজাতির প্লাঙ্কটন, ছয় প্রজাতির বেন্থিক এনেলিডা, দুই প্রজাতির বার্নাকেল ও এক প্রজাতির এসিডিয়ানর, বিভিন্ন প্রজাতির ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছির দেখা মিলেছে। গত ২৫ বছরে দ্বীপের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপের আয়তন ৭.৮৪ কিলোমিটার, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, এখানে সহজেই ভয়হীনভাবে সাঁতার কাটা যায়।

এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ লাল কাঁকড়া। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন লাল রঙের সৈকত। এ সৈকতে আমরা বিশাল জঙ্গলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কোন সরীসৃপ পাওয়া যায়নি। সরীসৃপ বাদে আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে পুরো জঙ্গলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এখনও গবেষণা করা যায়নি। যতটুকু অনুসন্ধান হয়েছে তাতে বাঘের কোন চিহ্ন না পেলেও হরিণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। দ্বীপের গবেষণা বিষয়ে সব কাগজপত্র আমরা সরকারের কাছে দাখিল করব। কারণ আমরা মনে করি, অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের সৌন্দর্য কোন অংশে কম নয়। এছাড়াও এ দ্বীপের আশপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোন মানব বসতি নেই, যার কারণে দ্বীপটি অনেকটাই সুনসান। এজন্য সরকারী পর্যায়ে এ দ্বীপের আন্তর্জাতিক প্রচার প্রয়োজন। এমনকি দেশের মানুষও জানে না যে, এ দেশে এত সুন্দর দ্বীপ রয়েছে।

যেভাবে যাবেনঃ-

বাংলাদেশে দক্ষিণের জেলা খুলনার মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল ও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন উপকূল দুবলারচর-হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগর গভীরে জেগে উঠেছে দ্বীপটি।