বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বিজয় সরণিতে অবস্থিত একটি জাদুঘর। জাদুঘরটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য সংক্রান্ত নিদর্শন ও বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রের সংগ্রহ নিয়ে জাদুঘরটি সজ্জিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার একটি পরিপূর্ণ সামরিক বাহিনী গঠন করে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জনসাধারনকে অবহিত করতে ২০০৪ সালে সামরিক জাদুঘর উন্মুক্ত করা হয়। নভোথিয়েটারের পাশেই শের-ই-বাংলা নগর থানার অধীনে বিজয়স্মরনীতে অবস্থিত সকলের জন্য উন্মুক্ত এই জাদুঘরটিতে প্রবেশ করতে কোন প্রবেশ মূল্য দিতে হয়না।
সামরিক জাদুঘরের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ট্যাংক পিটি-৭৬। রাশিয়ার তৈরি এই ট্যাংকটি পানিতেও ভেসে চলতে সক্ষম। এই ট্যাংকটি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকা থেকে বাংলাদেশ বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তান দখলদার-বাহিনীর নিকট হতে উদ্ধার করা হয়। সামরিক জাদুঘরের মাঠের উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে সুসজ্জিত ভাবে আরও ১৬টি ট্যাংক ও কামান প্রদর্শিত হচ্ছে। এগুলো খোলা আকাশের নীচে কেবল পাকাভিটি করে রাখা হয়েছে।
মাঠে পূর্ব প্রান্ত দিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ১০৫/৫২ সি এম ক্রুপ গান, ১৯৭৩ সালে মিসর কর্তৃক আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ব্যবহৃত ব্যারেল ১০০ মি. মি. ট্যাংক গান, অষ্টাদশ শতাব্দীর ছয়টি ছোট-বড় কামান। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে মোটরলঞ্চ ‘এম এল সূর্যোদয়’। এটি জাপান সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছিল।
মূল ভবনের দোতলায় রয়েছে ৮টি গ্যালারি। প্রথম গ্যালারিতে হাত-কুঠার, তীর, ধনুকসহ পুরনো যুগের অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে ডিবিবিএল গান, এসবিবিএল গান, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত হাতিয়ারসহ যুদ্ধাস্ত্র। তৃতীয় গ্যালারিতে এলএমজি, এসএমজিসহ মাঝারি অস্ত্র। চতুর্থ গ্যালারিতে রয়েছে মর্টার, স্প্যালো, এইচএমজিসহ ভারী অস্ত্র।
পঞ্চম গ্যালারিতে সর্বসাধারণের প্রদর্শিত হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক পরিচ্ছদ, র্যাঙ্ক, ব্যাজ ও ফিতা। ষষ্ঠ গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল, সেক্টর কমান্ডারদের পোর্ট্রেট, কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী। সপ্তম গ্যালারির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিজয় গ্যালারি’। এতে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাদের পোর্ট্রেট ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অষ্টম গ্যালারিতে রয়েছে সাবেক সব সেনাপ্রধানের তৈলচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরপ্রতীকদের নামের তালিকা।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বিজয়স্মরনী অতিক্রমকারী বেশকিছু লোকাল বাস চলাচল করে। আপনি যদি উত্তরা অথবা ফার্মগেট থেকে মহাখালী হয়ে চলাচল করেন তবে সামরিক জাদুঘরে পৌছাতে আপনাকে শের-ই-বাংলা নগরের বিজয় স্মরনীতে নামতে হবে।