বাহাদুর শাহ পার্ক| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

999

পুনান ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মাঝে একটি অন্যতম স্থান হল ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহের বিপ্লবীদের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্ক। ইংরেজদের শাসন-শোষণের ইতিহাস, ইংরেজ শাসকদের বর্বরতা ও স্বাধীনচেতা সেনাদের আত্মত্যাগের কালের সাক্ষী এ পার্ক। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান।

ইতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়, আঠার শতকের শেষের দিকে এই স্থানটিতে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। ক্লাবটিতে বিলিয়ার্ড খেলা ছাড়াও র‌্যাকেট, টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলতো এবং আড্ডা দিতো। এখানে পার্টি-ফাংশনও আয়োজন করা হত। বিলিয়ার্ডের সাদা গোল বলগুলো ডিমের মতো দেখতে বলে-স্থানীয় বাঙ্গালিদের চোখে ছিলো অদ্ভুত রকমের ‘ডিম’ যা আবার লাঠি দিয়ে ঠেলে খেলতে হয়! সুতরাং তারা এই ক্লাবের নাম দিল ‘আন্ডাঘর’! ধীরে ধীরে অপভ্রংশ হয়ে আন্ডাঘর উচ্চারিত হয় ‘আন্টাঘর’ নামে! পরবর্তীকালে অর্মেনীয়রা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়লে তারা ক্লাবটা বিক্রি করে দেয় ইংরেজদের কাছে। ইংরেজরা ক্লাব ঘরটা ভেঙ্গে একে খোলা পার্ক বানিয়ে ফেলে, তখন এটা পরিচিত হয়ে ওঠে ‘আন্টাঘর ময়দান’ নামে। সেখান থেকেই এসেছে ‘আন্টাঘর’ কথাটি।

ঊনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজরা এই জায়গাটিকে একটি পার্কের রূপ দেয় এবং এর চারদিকে লোহার দিয়ে ঘিরে দিয়ে এর চার কোণায় চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করে। অচিরেই স্থানটি জীর্ণ হয়ে গেলে ভেঙ্গে নওয়াব আব্দুল গণির উদ্যোগে একটি ময়দান মত তৈরি করা হয়। তখনো এর চারপাশে অনেক আর্মেনীয় বাস করত। ১৮৪০ সালেও এটি ছিল কয়েকটি রাস্তার মাঝে এক টুকরো খালি জায়গায় বৃত্তাকার একটি বাগান।

এই পার্কের স্মৃতিসৌধটি চারটি পিলার এর উপর দাঁড়ানো চারকোনা একটি কাঠামো। উপরে রয়েছে একটি ডোম। অপর পাশে রয়েছে একটি ওবেলিস্ক, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ভারতবর্ষের সম্রাজ্ঞী হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহণ মনে করিয়ে দেয়।

পার্কটি ঢাকার অন্যতম প্রধান নৌবন্দর সদরঘাট এলাকায় ঢুকতেই লক্ষ্মীবাজারের ঠিক মাথায় অবস্থিত। পার্কটি কে ঘিরে ৭টি রাস্তা একত্রিত হয়েছে। এর চারপাশে সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কারণে এটি পুরনো ঢাকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে সেন্ট থমাস চার্চ, উত্তর পাশেই অবস্থিত ঢাকার প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাংক।

উত্তর-পূর্ব কোণে আছে ঢাকার অন্যতম কলেজ কবি নজরুল সরকারী কলেজ এবং ইসলামিয়া হাই স্কুল, পূর্ব পাশে রয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় সরকারী মুসলিম স্কুল, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পার্কের ঠিক উত্তর পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঢাকার জজ কোর্ট। এছাড়া বাংলা বাজার, ইসলামপুর, শাখারী বাজারের মত ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা থেকে বর্তমান ঢাকার নতুন এলাকায় আসতে এ পার্ক এলাকার রাস্তাটিই প্রধান সড়ক।

কীভাবে যাবেন:

স্থানীয় যেকোন বাহনে করে আপনাকে জনসন রোডে পৌছাতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চেনা থাকলে আপনার জন্য বাহাদুর শাহ পার্কটিকে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে কেননা পার্কটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অবস্থিত।