ঢাকার সাভার উপজেলা সবার কাছেই বেশ পরিচিত। কেননা এই উপজেলাতেই রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এবং এখানে একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই উপজেলাতেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির নাম হচ্ছে আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তবে অনেকেই এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জানেন না। অর্থাৎ এই জমিদার বাড়িটি তেমন পরিচিত না।
প্রায় একশত সতেরো বছর আগে সাভার উপজেলার আড়াপাড়া নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে দুটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি করা হয়েছিল ১৯০০ সালে। পরবর্তীতে আবার আরেকটি ১৯৩৭ সালে করা হয়েছিল। মূল প্রাসাদটিতে লেখা রয়েছে রাই শশী নিবাস। আর পরবর্তীতে যে প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল সেটিতে লেখা রয়েছে রাই নিকেতন। আর একদম উপরে লেখা রয়েছে RM House যা ইংরেজি অক্ষরে লেখা।এই প্রাসাদগুলোর প্রবেশ পথে রয়েছে সিংহের মূর্তি এবং দুটি নারী মূর্তি, যা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এবং জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথে আরো রয়েছে সবুজ পানা পুকুর ও মন্দির।
আড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে ঢোকার পথে প্রথমেই চোখে পড়বে হাজামজা একটা সবুজ পানা পুকুর এটি রাধামন্দিরের । অন্যান্য রাধামন্দিরের চেয়ে এই মন্দির বেশ বড়।মন্দিরের পাশেই রয়েছে কাঠের তৈরী দোলনা ।ফাল্গুনে পূর্ণিমা তিথিতে রাধা-কৃষ্ণকে এই দোলনায় দোল খাওয়ানো হয়
আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির মন্দির থেকে বের হয়ে ডানে কালীমন্দির এবং আরেকটু ডানে গেলে পড়বে জমিদারবাড়ির সিংহদ্বার ।আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ডানের মূল পিলারের নিচে চোয়াল ভাঙা একটা সিংহ এবং বাঁ পিলারের সঙ্গী সিংহটি নেই
সিংহদ্বার থেকে একটা গলি রাস্তা গিয়ে থেমেছে জমিদারবাড়ির মূল প্রবেশপথে। সেখানে রয়েছে পাথরের দুইটি নারী মূর্তি।
মূল প্রবেশপথের দুই পাশে বারান্দাযুক্ত রুমের বাড়তি অংশ ।বারান্দায় রয়েছে চমৎকার লোহার কারুকাজ । প্রবেশ অংশ পার হয়ে মূল বাড়ির মাঝে খালি অংশ, উঠান। তারপর মূল ভবন। পাশে অপেক্ষাকৃত নতুন আরো একটা বর্ধিত ভবন। সিমেন্টে খোদাই করা নেমপ্লেট অনুসারে সিংহদরজার সোজাসুজি ‘রাই শশী নিবাস’-এর নির্মাণকাল বাংলা ১৩০৭ অনুযায়ী ইংরেজি ১৯০০ ।
আড়াপাড়া জমিদার প্রায় ১১৯ বছরের পুরনো ।সিঁড়ির দুই পাশেও দুটি ভাস্কর্য। পাশের ভবনের দেয়ালে ‘রাই নিকেতন’ লেখা এই যুগের নেমপ্লেট, সাল ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ। মানে প্রায় ৭৮ বছর আগের। আর বিল্ডিংয়ে একেবারে ওপরে ইংরেজিতে শুধু লেখা ‘আরএম হাউস’ ।চারদিকে বারান্দা ঘেরা বাড়িটির মাঝে খোলা জায়গা। একই রকম দুটি অংশ ।দুই পাশে দুটি চমৎকার সিঁড়ি।
কিভাবে যাবেন
সাভার বাসস্ট্যান্ড ফুট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোগুলো যায় সাভার বাজার। সঙ্গে কিছু অটো যায় আড়াপাড়ার পাশ দিয়ে পোড়াবাড়ী। ১০ টাকা ভাড়ায় ওই অটোতে উঠে আড়াপাড়া নেমে একটু হেঁটে পৌঁছানো যাবে আড়াপাড়া জমিদারবাড়ি। রিকশায় গেলে ভাড়া পড়বে ২৫-৩০ টাকা।