ব্রিটিশ শাসন আমলে এই বাংলার কৃষকরা ব্রিটিশদের চক্রান্তের শিকার হয়ে নীল চাষ শুরু করেন। যে সকল নীল চাষী তাদের কথা না শুনে নীল চাষে অস্বীকার করে তাদের উপর ব্রিটিশ সরকার পৈশাচিক নির্যাতন চালাতো। মেহেরপুরের ভাটপাড়া নীলকুঠি ও সাহারবাটি নীলকুঠির মধ্যে আমঝুপি নীলকুঠি সেই নির্যাতনের সাক্ষ্য বহনকরে আজও ইতিহাসের পাতায় অমলিন হয়ে আছে।
ইংরেজরা সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে নীল চাষ করার জন্য যে সব কুঠি গড়ে তুলে ছিলেন, সেসব কুঠিবাড়িই নীলকুঠি নামে পরিচিত। আমঝুপি নীলকুঠি ৭৭ একর ২৮ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। কুঠিবাড়ির দক্ষিণে কাজলা নদী। এই কুঠিবাড়ি ব্রিটিশ বেনিয়াদের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীল ব্যবসায়ীদের দোর্দণ্ড প্রতাপে একদিন মেহেরপুরসহ পশ্চিমবঙ্গের অগণিত কৃষক ছিল দিশেহারা। আজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নেই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নেই। জমিদার বাড়ির কাছারিও নেই। কিন্তু শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন-অত্যাচার আর ষড়যন্ত্রের স্মৃতি নিয়ে নীরব সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি বাড়ি। আমঝুপি কুঠিবাড়ির চৌহদ্দির ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় মূল ভবন। দক্ষিণমুখী মূল ভবনের সামনে রয়েছে বিশাল বারান্দা। বারান্দার সামনে সদর দরজার দুই পাশে ফুল বাগান।
এই বাগানে এখন ব্রিটিশ আমলের ফুলের সমারোহ নেই। সুদূর অতীতের স্মৃতি নিয়ে দুটি নীলগাছ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মূল ভবনের অভ্যন্তরে রয়েছে মোট ১৫টি কক্ষ। এর মধ্যে ৩টি বড় বেডরুম। কাঠের পাটাতন করা হলরুমের ডানদিকে ফায়ারপ্লেস। পিছনে ডাইনিং রুম। হল রুমটি কনফারেন্স হল এবং নাচঘর হিসাবে ব্যবহূত হতো বলে জানা যায়। মূল ভবনে রয়েছে মোট ৪টি সাজঘর এবং একটি সার্ভেন্ট কোয়ার্টার। অপেক্ষাকৃত সুশোভিত ঘরটি ব্যবহূত হতো ভিআইপি রুম হিসাবে। এ রুমটিতে রয়েছে মসৃণ মেঝে। সংলগ্ন বাথরুমে সাদা টাইলস যা প্রায় ২৬৬ বছরের পুরাতন। কাঠের আসবাবপত্রগুলোও সে আমলের ঐতিহ্য বহন করছে। অধিকাংশ দামি আসবাবপত্র ইতিমধ্যে খোয়া গেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ট্রাকে করে এখান থেকে খুলনার বয়রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হলরুমের ফ্লোরে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল এখন আর তা নেই। বাকি কক্ষগুলো ব্রিটিশ আমলের স্মৃতি বহন করছে। মূল ভবনের ডানদিকে রয়েছে কবুতর রাখার জন্য একটি সুন্দর বাসা। জনশ্রুতি রয়েছে ব্রিটিশ বেনিয়ারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কবুতর ব্যবহার করতো। এই কুঠি থেকে অন্য কুঠিতে চিঠিপত্রের আদান-প্রদানের জন্য পায়রার সাহায্য নেওয়া হতো। আরো ডানদিকে বাড়ির শেষ প্রান্তে রয়েছে নীল।
জনশ্রুতি অনুসারে, এই নীলকুঠিতেই রবার্ট ক্লাইভ ও মীরজাফর বাংলার শেষ স্বাধীন নবান সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে অনেক ইতিহাসবিদই এই ধারণাকে নাকচ করে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও গঠিত হয়েছিল বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে যা এই নীলকুঠির কাছেই।
যেভাবে যাবেনঃ-
মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ৭ কি: মি: । বাস, স্থানীয় যান টেম্পু/লছিমন/করিমন এর সাহায্যে ২৫ মি: সময়ে আমঝুপি নীলকুঠিতে পৌঁছানো যায়।