যশোর বাংলাদেশের একটি সুপ্রাচীনতম স্থান। প্রাচীনকালে এ জেলায় আর্য, দ্রাবিড়, মঙ্গল ও আদিম অধিবাসীরা বসবাস করত। নিষাদ, কিরাত ও বাগদি জাতির বসবাসও ছিল। এ জেলা অসংখ্য অধিবাসী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। হিন্দু রাজত্বের সময় বৌদ্ধদের জোর পূর্বক হিন্দু ধর্মে দিক্ষীত করা হয়। যোগী, ভড়ং, তাঁতী, মাহিষ্য, কপালি, নমশূদ্র প্রভৃতি জাতির লোকেরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ছিল। কায়েস্ত ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য জাতির লোকেরাও এদেশে বসবাস করত।
নামকরনের ইতিহাস:-
১৭৮১ সালে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জেলা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ। নামটি অতি পুরানো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে)আরবি শব্দ যার অর্থ সাকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেওয়া (১৩৯৮খৃঃ)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী নালায় পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বে নদী বা খালের উপর সাকো নির্মিত হতো। খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়।এই বাঁশের সাকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। তবে এই মতে সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কম। ইরান ওআরব সীমান্তে একটি স্থানের নাম যশোর যার সাথে এই যশোরের কোন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। খানজাহান আলীর পূর্ব থেকেই এই যশোর নাম ছিল। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রতাপদিত্যের পতনের পর চাঁচড়ার রাজাদের যশোরের রাজা বলা হত। কেননা তারা যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যের সম্পত্তির একাংশ পুরস্কার স্বরূপ অর্জন করেছিলেন। এই মতও সঠিক বলে মনে হয়। জে, ওয়েস্টল্যাণ্ড তাঁরযশোর প্রতিবেদনের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের আগে জেলা সদর কসবা মৌজার অর্ন্তভুক্ত ছিল। বনগাঁ-যশোর পিচের রাস্তা ১৮৬৬-১৮৬৮ কালপর্বে তৈরী হয়। যশোর-খুলনা ইতিহাসের ৭৬ পাতায় লেখা আছে “প্রতাপাদিত্যের আগে লিখিত কোন পুস্তকে যশোর লেখা নাই”। সময়ের বিবর্তনে নামের পরিবর্তন স্বাভাবিক।
ভৌগোলিক সীমানা:-
উত্তরে ঝিনাইদহ জেলা ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণ পূর্বে সাতক্ষীরা জেলা, দক্ষিণে খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারত। পূর্বে নড়াইল জেলা।
এ জেলায় ৮টি উপজেলা
যশোর সদর উপজেলা
অভয়নগর উপজেলা
কেশবপুর উপজেলা
চৌগাছা উপজেলা
ঝিকরগাছা উপজেলা
বাঘারপাড়া উপজেলা
মনিরামপুর উপজেলা
শার্শা উপজেলা
বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ:-
সনাতন গোস্বামী (১৪৮০-১৫৫৮)
রূপ গোস্বামী (১৪৮৯-১৫৫৮)
শ্রীজীব গোস্বামী (১৫১৩-)
সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৮৩৮-১৮৭৮)
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ – ২৯ জুন ১৮৭৩) – ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার;
কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮৯৩-১২ ডিসেম্বর ১৯৫৪) – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
ফররুখ আহমদ (১০ জুন ১৯১৮ – ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪) – মুসলিম রেনেসাঁর কবি;
সরোজ দত্ত – ভারতীয় বাঙালি বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী
গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) – মুসলিম রেঁনেসার কবি;
আবুল হোসেন (১৫ আগস্ট ১৯২২ – ২৯ জুন ২০১৪) – কবি;
এস এম সুলতান (১০ আগস্ট ১৯২৩ – ১০ অক্টোবর ১৯৯৪) – প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী;
বিখ্যাত খাবার:-
খই
খেজুর গুড়
জামতলার মিষ্টি
বিখ্যাত স্থান:-
হাজী মুহাম্মদ মহসিনের ইমামবাড়ী
মীর্জানগর হাম্মামখানা
ভরত ভায়না মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি
ভাতভিটা
সীতারাম রায়ের দোলমঞ্চ
গাজী-কালু-চম্পাবতীর কবর
বাঘানায়ে খোদা মসজিদ
পাঠাগার মসজিদ
মনোহর মসজিদ
শেখপুরা জামে মসজিদ
শুভরাঢ়া মসজিদ
মীর্জানগর মসজিদ
ঘোপের মসজিদ
শুক্কুর মল্লিকের মসজিদ
নুনগোলা মসজিদ
কায়েমকোলা মসজিদ
বালিয়াডাঙ্গা সর্বজনীন পূজামন্দির
দশ মহাবিদ্যামন্দির
অভয়নগর মন্দির
পঞ্চরত্ন মন্দির
ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির
রায়গ্রাম জোড়বাংলা মন্দির
লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির
মুড়লি শিবমন্দির
জোড়বাংলার দশভুজার মন্দির
চড়ো শিবমন্দির
নওয়াপাড়া পীরবাড়ী
পুড়াখালী বাওড়
খড়িঞ্চা বাওড়
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি যশোর জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। ঢাকার গাবতলি,সায়দাবাদ,মহাখালি বাস টার্মিনাল গুলো থেকে বাস পাওয়া যায়।কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেইন যাত্রা শুরু হয়।