শাহপরীর দ্বীপ, বাংলাদেশের একেবারের দক্ষিণ সীমান্তের নাম। এরপর আর কিছু নেই, শুধু বিস্তৃত জলরাশি। চারপাশে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। অনেক দূরে চোখ রাখলে দেখা যাবে জেলেদের নৌকা সাগরে মাছ ধরছে। আর কোথাও কিছু নেই, কেউ নেই। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের একটি অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা জনস্রোতের কারণে অনেকেই শাহপরীর দ্বীপ এর নাম জানেন। শাহপরীর দ্বীপ একসময় টেকনাফের মুল ভূ-খন্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল। এখন বলতে গেলে আলাদা হয়ে গেছে।
শাহপরীর দ্বীপের নামকরণ সম্পর্কে একাধিক মতবাদ রয়েছে। কারো মতে শাহ সুজার স্ত্রী পরীবানু ও শাহ সুজার শাহ শব্দ যুক্ত হয়ে এর নামকরণ হয়েছে। আবার কারো মতে, শাহ ফরিদ আউলিয়ার নামে দ্বীপের নামকরণ হয়। অপরদিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি সা’বারিদ খাঁ’র হানিফা ও কয়রাপরী কাব্যগ্রন্থের অন্যতম চরিত্র শাহপরী। রোখাম রাজ্যের রাণী কয়রাপরীর মেয়ে শাহপরীর নামে দ্বীপের নামকরণ হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
শাহপরীর দ্বীপে আসার পথে দেখতে পাবেন দুপাশে দিগন্তজোড়া লবনের মাঠ। দেখতে পাবেন লবনক্ষেতের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া খাল চোখের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে বহুদূর। সেসব খালে আহারের খোঁজে চরে বেড়ায় গাংচিলের সাদা সারি। দ্বীপের কাছে আসতেই দেখা মিলবে জালিয়াপড়া। সমুদ্রের ধারঘেষে লবণ প্রান্তরের সীমানায় কুঁড়ে ঘরে বাস করছে জেলে পরিবারগুলো। সমুদ্রের রক্তচক্ষু আর ঢেউয়ের গর্জনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দরিদ্র মানুষগুলো কোন সাহসের বলে এখানে বাস করছে এই ভাবনা আপনাকে সাহস যোগাবে। শাহপরীর দ্বীপের তিনটি সৈকত রয়েছে। এখান থেকে দেখা যায় মায়ানমারের মঙডু প্রদেশ। একটু সামনে থেকে দেখা যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এখানে আছে বিজিবি চৌকি ও ওয়াচ টাওয়ার।
যেভাবে যাবেনঃ-
শাহপরীর দ্বীপে যাওয়াটা কিছুটা কষ্টকর। শাহপরীর দ্বীপ টেকনাফ মূল ভূখণ্ডের সাথে একটি কাঁচা সড়ক দিয়ে যুক্ত। শীতের দিনে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য অটোরিক্সা পাওয়া যাবে। অটোরিক্সা শাহপরীর দ্বীপের ফেরীঘাটের সামনে নামিয়ে দেবে। আর বর্ষাকালে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সময়ের নৌকা বা ট্রলারে যেতে হবে।