শশী লজ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1676

পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত সবুজ সুন্দর শহর ময়মনসিংহের প্রাণকেন্দ্রে জমিদার আমলের এক অনন্য স্থাপনা রয়েছে। যার নাম শশী লজ। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে নয় একর জায়গায় একটি দ্বিতল ভবন তৈরি করেন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত। তাঁর দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ভবনের নাম রাখা হয় শশী লজ। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়। ১৯০৫ সালে একই জায়গায় পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আবার ভবন তৈরি করেন।

মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্তের বসতবাড়ি শশীলজ। নিজ পুত্র (ভাতিজা ও দত্তকপুত্র) শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ঊণবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি নির্মিত হয়। বাড়িটি ছিল দ্বিতল ভবন। প্রাসাদ ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ যা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিলো। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ভবনটির নির্মান শেষ করেন ১৯০৫ সালে এবং তাঁর নাম অনুসারে এর নামকরণ করেন ‘শশী লজ’।

নয় একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। সাধারণ বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে হলঘর, বিশ্রামঘর, নাচঘর, স্নানঘর। সর্বমোট ২৪ টি কক্ষ রয়েছে এই ভবনটিতে। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে রয়েছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্নানরতা মর্মর মূর্তি। লাল ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশীলজের পাশেই আছে পদ্মবাগান। শশী লজের ভেতরের বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গশালা। সুদৃশ্য সেই রঙ্গশালার এক প্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। মূল ভবনের পেছনভাগে রয়েছে একটি দোতলা স্নানঘর। কথিত আছে এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। এছাড়াও অর্ধ গোলাকার খিলান এবং ডরিক স্তম্ভ সম্বলিত প্রধান প্রবেশ পথটি শশী লজের স্থাপত্যিক সৌন্দর্য বাড়তি শোভা যোগ করেছে । বাড়িটিতে বেশ কিছু স্নানঘর রয়েছে। এক স্নানঘরে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথেই গোপনে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। উল্লেখ্য, মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতেও এই রকম একটি সুড়ঙ্গপথ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে ‘শশী লজ’কে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষনা করে এবং এখানে একটি জাদুঘর নির্মানের প্রকল্প নেয়া হয়। তবে অদ্যাবধি শশী লজের অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এটি ‘মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষন কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিভাবে যাবেনঃ-

সড়ক পথে ঢাকা হতে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে ময়মনসিংহ রেল স্টেশনের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার। ঢাকার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে ময়মনসিংহে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ২.৩০ হতে ৪.০০ ঘন্টা।

ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহে আসা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন ময়মনসিংহের পথে যাতায়ত করে।

মাসকান্দা বাস টার্মিনাল হতে রিক্সা, অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায় অথবা ব্রিজ হইতে রিক্সা, অটোরিক্সা ,টেম্পু যোগে যাওয়া যায়।