ষাট গম্বুজ মসজিদ| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

967

বাংলাদেশের পর্যটক আকর্ষণ ও শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এই মসজিদটি খুলনার বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। অনন্য স্থাপত্য শিল্পের কারনে মসজিদটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ষাট গম্বুজ মসজিদটি তুগলক স্টাইলে নির্মাণ করা হয়েছিল।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কে নির্মাণ করেন সেই সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে খান-ই-জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।সুলতান নসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।

মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানোসিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নামআন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মত। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।

মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাযের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিলো দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

কিভাবে যাওয়া যায়:

বাগেরহাট জেলা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক/ অটোরিক্সা যোগে ষাট গম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। গাড়ি থেকে নেমেই রাস্তার পাশে ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখা যায়।