সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি।| ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

1029

বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বাহক নিদর্শন রয়েছে যা দেশ, বিদেশের যেকোন পর্যটককে আকর্ষণ করতে পারে আর বলা যায় এই আকর্ষণের টানেই তারা বারবার ফিরে আসেন এদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পরিদর্শন করতে। এইসব স্থাপনার মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থাপনা হচ্ছে সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি। জায়গাটি আর কেউ নয় বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের বাসস্থান এটি।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের ঠিক পাশেই অবস্থিত এই সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি। এটি মূলত রাজাপুর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এখানে বাংলার বাঘ খ্যাত শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। আশেপাশের মানুষের তথ্যমতে, স্থাপনাটি সতেরশ সালের গোঁড়ার দিকে নির্মিত হয়েছিল।

এটি ছিল দুঃসাহসী নেতা ফজলুল হকের মায়ের বাড়ি। তিনি তার পুরো ছেলেবেলা এখানেই কাঁটিয়ে দিয়েছেন। শৈশবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও এখানকার একটি মক্তবেই নিয়েছেন তিনি। ছেলেবেলা কাটানোর পর তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের অনেক সময় এই বাড়িটিতেই ব্যয় করেছেন। এই বাড়িটি তাই ইতিহাসের অনেক উজ্জ্বল ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবেই বিবেচিত। শুরুতে বাড়িটিকে ‘’মিয়াবাড়ি’’ নামে ডাকা হত। এমনকি ঝালকাঠিকেও আগে ‘’বাকেরগঞ্জ’’ নামে ডাকা হত।

প্রায় তিন দশক আগের তৈরি এই ঐতিহাসিক বাড়িটি রাজাপুর উপজেলার বেকুতিয়া ফেরি ঘাটের পিছনেই অবস্থিত। পুরো জায়গাটিতে রয়েছে বিশাল ফুলের বাগান, অনেকগুলো পুকুর, তিনটি চমৎকার মুঘল স্থাপনা, এছাড়াও প্রাসাদের সামনে একটি প্রধান ফটক অবস্থিত। সমগ্র স্থাপনাটি বিশাল পরিমাণ প্রায় ১০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।

প্রাসাদটির প্রতিটি ভবনের দেয়ার অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন মুঘ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রতি পাথর মুঘল সাম্রাজ্যের দর্শনীয় দিনগুলির কথাই যে কাউকে স্মরণ করিয়ে দেবে। ভবনটির মূল অংশে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি প্রধান ফটক। তবেঁ, সত্যি কথা বলতে এখন আর এই জমিদার বাড়ি আগের মত উত্তাপ ছড়ায় না। এর অনেক অংশই ক্ষয়ে গেছে সময়ের স্রোতে। এমনকি যে ১০০ একর জমির উপর এটি গড়ে উঠেছে তারও অনেক জায়গা এখন আর নেই। এখন পুরো জমিদারবাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে কমতে কমতে মাত্র ২৫ একর জমির উপর। জমির একটি বিশাল অংশই দখল করে নিয়েছে স্থানীয় লোকজন তাঁদের নিজেদের স্বার্থে।

শের-ই বাংলার রাজনৈতিক জীবনেরও অনেকটা সময় কেটেছে সাতুরিয়ায়। কৃষকদের নিয়ে তিনি কৃষক প্রজা পার্টি গঠন করেন এ বাড়িতে থেকেই। কিন্তু, ইতিহাসের এই কিংবদন্তী পুরুষের জন্ম স্থান সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি আজ নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ বা স্টিমারে রাজাপুর ঘাটে নেমে যেকোনে পরিবহনে জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া সায়দাবাদ এবং গাবতলী থেকেও বাসে চড়ে রাজাপুর নেমে যেকোন পরিবহনে সাতুরিয়া যেতে পারেন।